প্রশান্তির খোঁজে হিমালয়কন্যার দেশে




নেপাল ভ্রমণ -  ১ম পর্ব

আশির দশকের একটি বাংলা সিনেমা আমাদের ছোটবেলায় বিটিভিতে দেখানো হতো। সিনেমার নাম ছিলো ‘নেপালি মেয়ে’। আজিজুর রহমান বুলির পরিচালনায়, জসিম, মাহমুদ কলি, ববিতা, অঞ্জনা অভিনীত সেই সিনেমার বেশিরভাগ দৃশ্য শুটিং হয়েছিল হিমালয় ও এভারেস্ট পর্বতশৃঙ্গের দেশ নেপালে। সিনেমায় নেপালের সৌন্দর্য দেখে দারুণ মুগ্ধ হয়েছিলাম। তখন থেকেই আগ্রহ ছিল যদি কোনোদিন সুযোগ পাই অবশ্যই একবার হলেও নেপালে যেতে চাই। সে সুযোগ চলে এলো অকস্মাৎ।

ভারতীয় ভিসা আবেদন বন্ধ। দেশের ভেতরে রাজনৈতিক নানা অস্থিরতায় ঘোরাঘুরি হচ্ছে না বললেই চলে। কিন্তু আমাদের মতো ভ্রমণপ্রেমীরা ঘরে বসে থাকতে তো পারে না। সিদ্ধান্ত নিলাম নেপালে যাব। দ্রুত বিমান টিকেটও কেটে নিলাম। নেপালেরই বেসরকারি বিমান সংস্থা হিমালয়া এয়ারলাইনসের টিকেট কেটে ভ্রমণ পরিকল্পনা তৈরি করতে বসে গেলাম। ছোটভাই রাজিব যেতে চায় আমার সাথে। তাকেও নিয়ে নিলাম। বিভিন্ন ট্রাভেল কোম্পানিতে যোগাযোগ করলাম প্যাকেজের জন্য। কিন্তু সবাই ২/৩ রাতের প্যাকেজ দিয়ে থাকে শুধু কাঠমান্ডুর জন্য। কিন্তু আমার তো এত কম সময়ে হবে না। মিনিমাম ৫ রাত থাকা দরকার। কাঠমান্ডুর সাথে পোখারা, নাগরকোটও ঘুরতে হবে। সিদ্ধান্ত নিলাম কোনো এজেন্সি ছাড়া নিজেই প্যাকেজ তৈরি করবো। যেই ভাবা, সেই কাজ। ৫ রাত ৬ দিনের একটি ট্যুর প্যাকেজ তৈরি করতে করতে আমাদের সাথে আরও দুজন যুক্ত হলেন। ছোটভাই রুহুল আমিন আর বড়ভাই কয়েস আহমেদ যাবেন আমাদের সাথে। চারজনের একটা গ্রুপ হয়ে গেলো। ঝটপট বুকিং ডটকম থেকে হোটেল ও ঢাকা যাওয়ার জন্য ট্রেনের টিকেট কেটে নিলাম।

৩রা অক্টোবর বিকাল সাড়ে চারটায় আমাদের ফ্লাইট। রাতের উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন থেকে রওনা দিলাম ঢাকার উদ্দেশে। বৃষ্টি হচ্ছিল সন্ধ্যা থেকেই। সকালে ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে নেমে দেখি ঢাকাতেও বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে চলে গেলাম একটি হোটেলে। দুপুর পর্যন্ত বিশ্রাম নিয়ে এয়ারপোর্টে যাবো। হোটেলে গিয়ে সটান ঘুম দিলাম চারজনেই। উঠলাম দুপুর ১২টার দিকে। ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া করে নিলাম। হোটেল থেকে বের হয়ে একটা প্রাইভেট গাড়িতে করে এয়ারপোর্টের দিকে যাত্রা শুরু করলাম।

এয়ারপোর্টের কাছেই যেহেতুই ছিলাম, বেশিক্ষণ লাগল না। আন্তর্জাতিক বহির্গমনের টার্মিনালে ঢুকে গেলাম। আমরা যেহেতু হিমালয়া এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে যাব, সেটার চেকইন কাউন্টার খুঁজতে থাকলাম। ইমিগ্রেশন হেল্প ডেস্কের সাহায্য নিয়ে চলে গেলাম কাউন্টারের সামনে। গিয়ে দেখি লাইন হয়ে গেছে। তবে লাইনটা বড় না থাকায় অল্প সময়েই চেকইন করে বোর্ডিং পাস নিয়ে নিলাম। এবার ইমিগ্রেশনের পালা। ইমিগ্রেশনে গিয়ে পাসপোর্ট এগিয়ে দিতেই আমি আর রাজিব দুজনকেই পাঠিয়ে দিলো প্রসিকিউশন রুমে। ইমিগ্রেশন হিস্টরিসহ নানা ধরনের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের জন্য দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখল আমাদের। আমরা এর আগে শুধু ভারতে ঘুরেছিলাম। নেপাল যাওয়ার রিটার্ন টিকেট, হোটেল বুকিংসহ সকল ডকুমেন্ট সাথেই ছিল। তবু কেন এরকম করছিল তারা বোধগম্য নয়। নেপালের মতো দেশে যেতেও যদি এত সমস্যা করে ইমিগ্রেশন, তাহলে মানুষ যাবেটা কোথায়? যা হোক, ঘন্টাদেড়েক পরে আমাদের পাসপোর্ট দেয়া হলো। এরমধ্যে একবার ডেকে নিয়ে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখতে চেয়েছে, আরও কিছু অপ্রাসঙ্গিক ডকুমেন্ট। খুব বিরক্ত লাগছিল। কিন্তু কিছুই করার নেই, এসব হয়রানি দেখারও কেউ নেই। পাসপোর্ট দেয়ার আগেই এয়ারলাইনসের সিকিউরিটি চেকইন শুরু হয়ে গেছে। আমাদের অন্য দুজনের ইমিগ্রেশন হয়ে গেছে সহজেই। আমাদেরসহ আরও অনেক যাত্রীকেই এভাবে হয়রানি করছিল, আটকে রাখছিল অযথাই। তাড়াহুড়ো করে ইমিগ্রেশন সিল নিয়ে সিকিউরিটি চেকইনে গেলাম। সেটা সম্পন্ন করেই দেখি বোর্ডিং শুরু হয়ে গেছে। দ্রুত গিয়ে ফ্লাইটে উঠে পড়লাম।

মেঘের ভেতরে ছুটেচলা; ছবিঃ লেখক 



যেহেতু আমি আর রাজিব একসাথে চেকইন করেছি, আমরা পাশাপাশি সিট ও একটা উইন্ডো সিট নিয়েছি। আমি ভিডিওগ্রাফি করার জন্য জানালার পাশে বসলাম। অন্য দুজন আমাদের ঠিক পেছনের সারিতে পাশাপাশি সিটে। বৃষ্টি তখনও হচ্ছিল। বৃষ্টি সেদিন সারাদেশেই হচ্ছিল। বৃষ্টির মধ্যেই হিমালয়া এয়ারলাইনসের এয়ারবাস ৩২০ সিরিজের এয়ারক্রাফটটি আমাদেরকে নিয়ে উড়াল দিলো আকাশে। মেঘ ফুঁড়ে চলে গেলো হাজার হাজার ফিট ওপরে। চারদিকে মেঘের শামিয়ানা। সাদা আর কালো মেঘ, কখনো মেঘলা আকাশ আবার কখনো ঝকঝকে রোদের খেলা দেখতে দেখতে ছুটে চলছিলাম। এরমধ্যেই হালকা খাবার এলো। এক প্যাকেট বিস্কিট, একটা জুস, এক প্যাকেট বাদাম ভাজা আর একটা আধা লিটারের পানি ছিল খাবার। একটা ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটে ৩২ হাজার টাকার টিকেটে এরকম খাবার পাব আশা করিনি। কিন্তু কী আর করা। ৩২-৩৫ হাজার টাকার ফ্লাইটে ১০০টাকা সমমূল্যের খাবার হাস্যকর লাগল।

খাবার খেতে খেতে পৌঁছে গেলাম কাঠমান্ডুর আকাশে। নেপালের রাজধানী চোখে ভাসল। পাহাড়ের মাঝখানে নান্দনিক এক নগরীর আকাশে ভাসতে ভাসতে বিমান ল্যান্ডিংয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকল। একদম মসৃণভাবে আমাদের আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে আনলেন পাইলট মহোদয়। চাকা থেমে যাওয়ার পর নামার তোড়জোড় শুরু হলো। সবাই একে একে নেমে গেলাম। রানওয়ে থেকে এয়ারলাইনসের নিজস্ব বাসে করে চলে গেলাম ইমিগ্রেশনের দিকে। ঢাকার ইমিগ্রেশনে যতটা হয়রানি ছিল, কাঠমান্ডুতে ততটাই মসৃণ। নেপালে অন অ্যারাইভাল ভিসা নিতে হয়। একটা ফর্ম পূরণ করে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে গেলেই ভিসা দিয়ে দেয়। ৩০ দিনের জন্য বছরে একবার এই ভিসা ফ্রি। কিন্তু ৩০ দিনের বেশি থাকলে ভিসা ফি দিতে হবে। আমরা যেহেতু ৩০ দিনের জন্য নেব, তাই ফ্রি পেলাম। ইমিগ্রেশনে শুধু জিজ্ঞেস করল ‘প্রথমবার নেপাল?’ আমি বললাম, হ্যাঁ। এরপর আর কিছুই জানতে চায়নি। ভিসার সাথে সিলও দিয়ে দিলো। এত মসৃণ ও পেশাদারভাবে তারা কাজ করছে, যা মুগ্ধ করার মতো। অথচ নিজদেশেই হয়রানির শিকার হলাম!

একটা আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে এমন খাবার নিতান্তই অপ্রতুল ছিল; ছবিঃ লেখক



এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে এবার হোটেলে যাওয়ার পালা। আমাদের রিসিভ করার জন্য আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল ছোটভাই শোয়েব। সে আমাদের এলাকারই ছেলে। নেপালে একটা বিশেষ কাজে আছে বেশ কিছুদিনধরে। আমরা যাওয়ার খবর শুনে বলেছিল, সেও আমাদের সাথে পোখারা ঘুরতে যাবে। সেজন্য আজকের রাতটা তার হোটেলেই থেকে যাব। সে একটা রুমও বুক করে রেখেছে। বাইরে এসে শোয়েবকে সহজেই পেয়ে গেলাম। সে একটা ট্যাক্সি হায়ার করল হোটেল পর্যন্ত যাওয়ার জন্য। একহাজার রুপি ভাড়া, ৬ সিটের ট্যাক্সি। আমরা চড়ে বসলাম। কাঠমান্ডু শহরের রাতের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে এগিয়ে চলছিলাম। হঠাৎ ট্যাক্সি বিগড়ে গেলো। স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেলো। অনেক চেষ্টায়ও আর কাজ হলো না। অগত্যা ট্যাক্সি ছেড়ে দিয়ে বাসে চেপে বসলাম সবাই। নেপালে এসে শুরুতেই পাবলিক বাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে নিলাম। ভালোই লাগল। সমস্যা হলো বাস যেখানে নামিয়ে দিলো, সেখান থেকে হোটেল বেশ দূরে। হেঁটেই রওনা দিলাম। ১৫ মিনিটে পৌঁছে গেলাম।

রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম আবারও। সিম কিনতে হবে আমাদের। সেই সাথে রাতের খাবার খেতে হবে। খিদেও পেয়েছে সবার। আমরা চারজনের জন্য দুটো সিম নিলাম ২০০ রুপি করে। সেইসাথে এক সপ্তাহের জন্য আনিলিমিটেড ইন্টারনেট, ১৯৯ রুপি করে। চারজনে শেয়ার করে ব্যবহার করে নেব। সিম কিনে খেতে গেলাম একটা বাংলাদেশি মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টে। নেপালে এসেই দেশের মতো করে রান্না খেতে পারব ভাবিনি। তৃপ্তি নিয়ে খেলাম। খেয়ে রেস্টূরেন্ট মালিকের সাথে গল্প করলাম। শরিয়তপুরে বাড়ি ভদ্রলোকের। ভাগ্যের ফেরে নেপালে এসে ব্যবসা করছেন। বিজনেস ভিসায় আছেন পরিবারসহ। ভালো লাগল তার আন্তরিকতায়। খেয়েদেয়ে রুমে চলে গেলাম। ক্লান্ত সবাই। আজ আর ঘোরাঘুরির ইচ্ছে বা সুযোগ কোনোটাই এই। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কালকে যাব পোখারা। বাস ধরতে হবে খুব সকালে। সুতরাং ঘুমানো দরকার।

রাতের আঠমান্ডু শহর অনেক বেশি নীরব। তার ওপর হালকা হালকা ঠাণ্ডাও পড়ছে। বেশ আরামদায়ক আবহাওয়া। বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলাম, চা খেলাম। এরপর আমরা কম্বলমুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম। ক্লান্ত দেহে গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে গেলাম।

সকালের কাঠমান্ডু মানেই একরাশ মুগ্ধতা; ছবিঃ লেখক



পোখারার পথে যাত্রা

আজ ৫ই অক্টোবর ২০২৪। ঘুম ভাঙল খুব সকালে। জানালা খুলে তাকিয়ে দেখি পাহাড়ের চমৎকার একটি ভিউ উঁকি দিচ্ছে। এত সুন্দর সকাল অনেকদিন দেখি না। কাঠমান্ডু কতটা সুন্দর তার একটা চিত্র দেখা গেলো সকালবেলাতেই। কিন্তু আমরা তো আজ কাঠমান্ডু থেকে পোখারা চলে যাব। নেপালের সবচেয়ে সুন্দর শহর হলো পোখারা। আগামী দুইদিন সেখানেই আমরা থাকব, ঘুরে দেখব পুরো পোখারাকে। সকাল সকাল চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ছোটভাই শোয়েব চলে গেলো বাস টার্মিনালে। ঝটপট টিকেট নিয়ে এলো আমাদের ছয়জনের জন্য। আমরা রেডি হয়ে রওনা দিলাম সকাল ঠিক আটটায়। বাস ছাড়বে সাড়ে আটটায়। দ্রুত পৌঁছানো দরকার।

কাঠমান্ডু শহরের অন্যতম একটি বাস টার্মিনাল হলো বাস পার্ক। সাজানো-গোছানো ও একদম পরিচ্ছন্ন একটি বাস টার্মিনাল। দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। সাথে আফসোসও হলো আমাদের দেশের বাস টার্মিনালগুলোর কথা ভেবে। কী পরিমাণ নোংরা করে রাখি আমরা টার্মিনালগুলোকে! যা হোক, বাসে ওঠে পড়লাম। এসি বাস। সিটগুলো সোফায় মোড়ানো। বেশ আরামদায়ক। টিকেট জনপ্রতি ১ হাজার নেপালি রুপি। বাসের সিটে বসার পরপরই বাস ছেড়ে দিলো। কাঠমান্ডু শহর মাড়িয়ে বাস ছুটে চললো পোখারার দিকে।

কাঠমান্ডু থেকে পোখারার দূরত্ব ২০২ কিলোমিটার। কিন্তু পুরো রাস্তাতেই কাজ চলমান থাকায় এবং পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা হওয়ায় সময় লাগে প্রচুর। তার ওপর ২/৩দিন আগেই আকস্মিক বন্যায় পাহাড়ধ্বস হয়ে অনেক মানুষ মারা গেছেন। আমরা যাওয়ার আগেই অবশ্য আবহাওয়া ঠিক হয়ে যায়। এখন বন্যা, বৃষ্টি কিছুই নেই। ঝকঝকে রোদ। রাস্তায় পাহাড়ধসের যে জঞ্জাল ছিল সেগুলোও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ফলে আমাদের চলতে সমস্যা হয়নি। ধীরে ধীরে শহর ছেড়ে বাস পাহাড়ি পথ ধরল। রাস্তা যতই ভাঙাচোরা হোক, দুইপাশের সৌন্দর্য অবাক করার মতো। বিশাল বিশাল পাহাড়, একপাশে পাহাড়ি নদী, একপাশে রাস্তা। এই রাস্তাটার কাজ সম্পন্ন হলে সৌন্দর্য দেখার জন্য হলেও লোকে সড়কপথে পোখারা যাবে।

কাঠমান্ডু-পোখারা রোডে এমন দৃশ্য পুরোটা রাস্তাজুড়েই চোখে পড়বে; ছবিঃ লেখক




নেপালে কোনো রেলপথ নেই। বাস আর ফ্লাইট। কাঠমান্ডু থেকে পোখারা ফ্লাইটের ভাড়া ১০০ ডলার প্রতিজন। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আসা পর্যটকেরা ফ্লাইটেই যায়। আমাদের মতো বাজেট ট্রাভেলারদের ভরসা বাস। অবশ্য আরেকভাবেও যাওয়া যায়। যদি ১০/১২ জনের গ্রুপ হয়, তাহলে বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্সি আছে। সেগুলোর ভাড়া ১৫-২০ হাজার রুপি পড়বে। আমরা ছয়জন ছিলাম, তাই বাসই ভরসা। যা হোক, যাত্রাপথে মোট তিনবার বিরতি দিলো বাস। তারমধ্যে দুপুরের খাবারও একটা হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে সেরে নিলাম। এরমধ্যেই হোটেল থেকে নক দিলো হোয়াটসঅ্যাপে। জানতে চাইল কখন যাব। বললাম, আসছি। সকাল নয়টায় রওনা দিয়ে দীর্ঘ ১০ ঘন্টার ক্লান্তিকর ভ্রমণ শেষে সন্ধ্যা সাতটায় পৌঁছে গেলাম পোখারায়। বাস থেকে নেমে হোটেলে যাওয়ার জন্য দুটো ট্যাক্সি নিলাম। ৩০০ রুপি করে দিতে হলো। ট্যাক্সি পৌঁছে দিলো আমাদের নতুন গন্তব্য হোটেল গুডওয়ানে, যেটা পোখারা লেইকসাইটের একটা নান্দনিক লোকেশনে পড়েছে।

হোটেলে চেকইন করে, ফ্রেশ হয়ে বের হলাম রাতের খাবার খেতে। পোখারা একটা ব্যয়বহুল সিটি। কারণ এখানে সবাই বিদেশি। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আসা পর্যটকেরা গিজগিজ করে। লেকসাইডে হাঁটতে গিয়ে সেটা টের পেলাম। কিন্তু খাবার খুঁজতে গিয়ে দেখি সব ভেজ বা নিরামিষ রেস্টুরেন্ট। এরপর একটা ‘হালাল রেস্টুরেন্ট’ লেখা রেস্টুরেন্ট পেলাম, নাম লাজ্জাত। সেখানেই খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। চরম ক্ষুধার্ত সবাই। গিয়ে অর্ডার করলাম ভাত, খাসির মাংসের একটা ভিন্নধর্মী আইটেম, ডালভুনা ও আলুভর্তা। খাবারগুলো অনেক ভালো লাগল। হয়তো খিদের জন্যই। খেয়ে বিল দিতে গিয়ে দেখি প্রতিজন ৭৫০ টাকার মতো পড়েছে। নেপালে খাবার অনেক দাম জানতাম। কিন্তু এতদাম হবে ভাবিনি। আসলে নেপালে কিছুই উৎপাদন হয় না বললেই চলে। সবকিছুই আমদানি করতে হয়। তাই দাম একটু বেশিই। খেয়েদেয়ে একটু লেকসাইডে হাঁটাহাঁটি করে রুমে চলে এলাম। হোটেলের রিসিপশনে বলে রুমে চা আনিয়ে নিলাম। চা-পানে শরীর চাঙ্গা হলো কিছুটা। ব্যালকনিতে গিয়ে বসলাম কিছুক্ষণ। রাতের পোখারা অদ্ভুত সুন্দর, নির্জন শহর। নেই কোনো শব্দদূষণ। বিভিন্ন জায়গায় জরুরি ফোন করে নিলাম। এরপর শুয়ে পড়লাম বিছানায় এসে। সকাল আমাদের সারাদিন পোখারা এক্সপ্লোর করতে বের হতে হবে। সারাদিনের জার্নিতে ক্লান্ত শরীরটা সহজেই ছেড়ে দিলো, ঢলে পড়ল ঘুমের কোলে।

ক্রমশ... (২য় পর্ব দেখুন)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ