সালমান শাহঃ দ্য লাস্ট হিরো


দেখতে দেখতে মহানায়ক সালমান শাহর প্রয়াণের ২৬টা বছর হয়ে গেল। কিন্তু আজও মনে পড়ে ১৯৯৬সালের ৬ই সেপ্টেম্বর দিনটিকে। ‘স্বপ্নের নায়ক’ সালমানের অনাকাঙ্খিত মৃত্যুতে সেদিন পুরো জাতিই ‘বিক্ষোভ’-এ ফেটে পড়েছিল। ‘প্রিয়জন’ হারানোর বেদনার চেয়েও কম বেদনার ছিল না প্রিয় অভিনেতা, প্রিয় নায়ককে হারানোর বেদনা।

১৯৯৩ সালের ২৫শে মার্চ দিনটিতে বাংলা চলচ্চিত্রে ধুমকেতুর মত আবির্ভাব হয়েছিল যে মহানায়কের, তিনি কত সহজেই না ঠাঁই নিয়েছিলেন চলচ্চিত্রপ্রেমী প্রতিটি মানুষের ‘অন্তরে অন্তরে’। আবির্ভাবের সাথে সাথেই দেশের চলচ্চিত্রশিল্পের ‘আশা-ভালোবাসা’য় পরিণত হওয়া চাট্টিখানি কথা ছিল না, যেখানে রাজত্ব করছিলেন আরও অনেক জনপ্রিয় নায়ক।

মহানায়ককে নিয়ে এত বেশি তরুণী স্বপ্ন দেখত যে রীতিমত তারা ‘প্রেমযুদ্ধ’তে জড়িয়ে পড়েছিল। কত তরুণীর হৃদয়ে আলোড়ন তুলেছিলেন সালমান, কত তরুণী তাকে বলেছিল ‘তুমি আমার’, কতজন বারবার বলেছে শুধু ‘তোমাকে চাই’, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সুদর্শন ও স্টাইলিশ সালমানের জন্য কতজন হতে চেয়েছিলেন 'সুজন সখী'র সেই কানে সোনার দুলপরা সখী, কতজন নিজেকে ভালোবাসার 'আঞ্জুমান' ভেবেছিলেন, কত পিতা সালমানকে নিজের ‘কন্যাদান’ করতে চেয়েছিলেন, কত মাতা তাকে ‘স্নেহ’ আর ভালোবাসার শিকলে বাঁধতে চেয়েছিলেন তারও কোনো সঠিক হিসেব নেই। 

কিন্তু যখন লাখো তরুণীর হৃদয় ভেঙে রীতিমত ‘দেনমোহর’ দিয়ে সামিরা নামক অখ্যাত এক তরুণীর সাথে ‘জীবন সংসার’-এ আবদ্ধ হয়েছিলেন তখন অনেকেই ভেবেছিল মহানায়কের জনপ্রিয়তায় হয়তো ধ্বস নামবে। কিন্তু ‘প্রেম পিয়াসী’রা যে নায়কের বিবাহে কমই বিচলিত হয় তা বোঝা গিয়েছিল তার প্রয়াণের পর তরুণীদের আত্মহত্যার মিছিল দেখে। যে নায়ক দুর্দান্ত অভিনয়ে মানুষের চোখে ‘আনন্দ অশ্রু’ নিয়ে আসতেন কিংবা ‘বুকের ভিতর আগুন’ জ্বালিয়ে দিতেন তিনিই এত তাড়াতাড়ি নিজের ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ ছেড়ে অন্য পৃথিবীতে চলে যাবেন কেই বা ভাবতে পেরেছিল! 

দীর্ঘ ছাব্বিশ বছর পেরিয়ে গেছে। কত নায়ক এসেছেন, কত গত হয়েছেন। কিন্তু বাংলা চলচ্চিত্র কিংবা এর কোটি দর্শক আজও আশায় থাকেন আরেকজন সালমান এসে এই মৃতপ্রায় শিল্পটিকে জাগিয়ে তুলবেন। কিন্তু আমাদের সেই প্রত্যাশা আজও পরিণত হয়নি ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’য়। এখনও তাই আমাদের লাস্ট হিরো হয়ে আছেন একজন সালমান শাহ। যে চলচ্চিত্রাঙ্গনকে সালমান নিজের ‘এই ঘর এই সংসার’-এ পরিণত করেছিলেন, যে এফডিসি ছিল তার ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, আজ সবই পড়ে আছে। নেই 'শুধু তুমি'। 

মহানায়কের মৃত্যুকে যতই আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হোক, সালমানের মায়ের মতো এ দেশের কোটি মানুষ এখনও বিশ্বাস করে হত্যা করা হয়েছিল তাকে। কিন্তু অসংখ্য রাঘব বোয়ালদের মত সালমানের হত্যাকারীরা আজও থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। হয়তো একদিন এই হত্যাকাণ্ডের ‘বিচার হবে’। যে বিচারের আশায় এখনও নায়কের দুখিনী মা কাঁদেন, প্রতীক্ষার প্রহর গুনেন। পুত্রহত্যার বিচার পাওয়া প্রতিটি ‘মায়ের অধিকার’। অথচ সেই অধিকার থেকে আজও বঞ্চিত সালমানের মা! 

‘সত্যের মৃত্যু নেই’ যেমন, তেমনি সালমানদেরও মৃত্যু নেই, মৃত্যু হয় না। দেশের ইতিহাসে অনেক নায়ক অকালে মারা গেছেন। কিন্তু মৃত্যুর এত বছর পরও এত জনপ্রিয়তা আর কোনো নায়কের আছে কী না তাতে ঘোর সন্দেহ। বাংলা সিনেমা যতদিন বেঁচে থাকবে, বেঁচে থাকবে সিনেমাপ্রেমীরা; ততদিন বেঁচে থাকবেন সালমান শাহও। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ পর্যন্ত আমাদের মত সিনেমাপ্রেমীরা সালমান শাহকে ভালোবেসে যাবে তা অকপটেই বলা যায়। যেখানেই থাকো ভালো থেকো সালমান, দ্য লাস্ট হিরো!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ