রাশেদ সবার চেয়ে অনেক আলাদা, বয়স কম হলেও ম্যাচিউরিটি ও সাহস অনেক বেশি। তাদের ক্লাসের
গুণ্ডা ও কয়েকবার ফেল করে একই ক্লাসে থাকা বয়সে অনেক বড় কাদেরের সাথেও মারামারি করতে
পিছপা হয় না। সবাই কাদেরকে ভয় পেলেও সে পায় না। রাশেদের এমন অনন্য গুণ তাকে ইবু, ফজলু,
দীলিপ ও ক্লাসের ফার্স্টবয় আশরাফের সাথে দারুণ বন্ধুত্বে আবদ্ধ করে ফেলে। একসময় রাশেদ
হয়ে যায় তাদের মধ্যমণি।
ইবুরা বিভিন্ন জিনিষ বানানোর এক্সপেরিমেন্ট চালাতে ভালোবাসে। যেমন বিস্কুট, ওষুধ ইত্যাদি
বানাতে চায়। এজন্য তারা পরামর্শ নেয় তাদের এলাকার শফিক ভাইয়ের। শফিক ভাই কলেজে পড়েন,
একই পাড়ার কলেজপড়ুয়া অরু আপাকে পছন্দ করেন। ইবুরা সব জানলেও বুঝতে দেয় না। রাশেদকে
নিয়ে ওরা ওষুধ বানানো শিখতে শফিক ভাইয়ের সাথে আলাপ করতে যায়। শফিক ভাই দেখেন ইবুদের
সাথে নতুন ছেলেটা দেশের রাজনৈতিক সবকিছুই জানে। তিনি অবাক হন। গল্পের এক পর্যায়ে শফিক
ভাই হঠাৎ করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন, 'দেশের অবস্থা খুব খারাপ সেটা জান?' তখন
সবার আগে রাশেদ বলে ওঠে 'হ্যাঁ জানি।' কী জান? তখন রাশেদ বলে, 'ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদ
বন্ধ করে দিয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তান বাঙালিদের ক্ষমতায় যেতে দেবে না।' শফিক ভাই আবার
জানতে চান, 'তুমি কেমন করে জান বাঙালিদের ক্ষমতায় যেতে দেবে না?' তখন রাশেদ আবার বলতে
থাকে, 'পশ্চিম পাকিস্তান আমাদের শোষন করে বেঁচে থাকে। আমরা ক্ষমতায় গেলে আর শোষন করতে
পারবে না।' শফিক ভাই ইবুর রাজনৈতিক জানাশোনা দেখে অবাক হন।
এভাবেই গল্প চলতে থাকে। রাশেদ শহরের বিভিন্ন মিছিলে অংশগ্রহণ করে, ইবুরা চাইলেও যেতে
পারে না। কারণ তারা রাশেদের মত স্বাধীনভাবে কিছু করতে পারে না।
১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী,
চালায় ইতিহাসের বর্বরতম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড। ইবুদের শহরেও খবর পৌঁছে যায়, রাশেদ সব
খবরাখবর রাখে। একদিন রাশেদ ইবুদের স্বাধীন বাংলার পতাকা দেখায়, তারা আশ্চর্য হয়। স্বাধীন
বাংলার কথা ভেবে শিহরিত হয়। ভাবে সত্যিই কি স্বাধীন বাংলা হবে?
এপ্রিলের ত্রিশ তারিখ মিলিটারি আসে ইবুদের শহরে। এসেই শুরু করে হত্যাকাণ্ড। রাশেদরা
যে স্কুলে পড়ে সেটাকেই বানায় ক্যাম্প। প্রথমেই পাকিস্তানি দালাল, সাবেক সাংসদ খান সাহেবকে
ও তার দুই সহযোগীকে হত্যা করে ফেলে। এরপর আরেক দালাল আজরফ ও তার সহযোগীরা পাকিস্তানের
পতাকা হাতে নিয়ে 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' স্লোগান দিয়ে ক্যাম্পে যায়। ফলে তাকে মারে না
মিলিটারিরা। সে যোগ দেয় রাজাকার বাহিনীতে। তার সাথে আরও অনেকে যোগ দেয়। রাশেদ বিভিন্ন
চিঠি লিখে উড়ো হুমকি দিয়ে ভয় দেখায় আজরফকে। তাতে ইবু ও রাশেদ দুজনেই মজা পায়।
একসময় শহরে মুক্তিবাহিনী নামে। রাশেদ তাদের সাথে যোগাযোগ করে জানায় তাদের কাছে স্কুলের
ম্যাপ আছে। চোর-পুলিশ খেলতে গিয়ে ফার্স্টবয় আশরাফ বানিয়েছিল। সেটাকেই মডিফাই করে ক্যাম্পের
অস্ত্রাগার ও সবকিছু বসিয়েছে রাশেদ।সেই ম্যাপ নিয়ে একদিন রাতে সবার অগোচরে মুক্তিবাহিনীর
ক্যাম্পে গিয়ে দেখা করে ইবু ও রাশেদ। কমাণ্ডার তাদের নিখুঁত ম্যাপ দেখে খুশি হন। নিরাপত্তার
জন্য তাদেরকে সেদিন রাতে ক্যাম্পেই রেখে দেন। হঠাৎ দেখা হয় শফিক ভাই ও তাদের সহপাঠী
কাদেরের সাথে। দেখে দুজনেই মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন।
রাশেদদের ম্যাপ অনুয়ায়ী একটা অপারেশন করা হবে, শফিক ভাই পজিশন অনুযায়ী পৌঁছে গেলেও
বেশি গুলি নিতে পারেন না। রাশেদ, ইবু, ফজলু, আশরাফরা নিজেদের শরীরের সাথে গুলির ছড়া
বেঁধে ওপরে শার্ট পরে ফুটবল হাতে নিয়ে খেলতে খেলতে গুলি পৌঁছে দেয়। গুলি দিলেও শফিক
ভাইয়ের সহযোগী দরকার হয়, গুলি এগিয়ে দেয়ার জন্য। রাশেদ আর ইবু সিদ্ধান্ত নেয় তারাই
কাজটা করবে। কিন্তু শফিক ভাই রাজি হন না। পরে রাশেদদের দৃঢ়তার কাছে হার মেনে রাজি হন।
রাতে শুরু হয় যুদ্ধ। অনেকই হতাহত হয়, মিলিটারিদের অস্ত্রাগারের একটা অংশ উড়িয়েও দেয়
তারা। শফিক ভাই এক পর্যায়ে গুলি খান। পিছিয়ে যান। আগেই স্টেনগান চালানোর বেসিক কায়দা
শিখিয়ে দেয়ায় রাশেদ কাভার দেয় বাকিটা। গুলি ফুরিয়ে যাওয়ার পর রাজাকাররা তাদের দিকে
এগিয়ে আসে। শফিক ভাই তাদের দুজনকে যেতে বলেন। তারা যায় না। শফিক ভাই জোর করে তাড়িয়ে
দেন এবং তিনি ধরাও পড়েন।
ধরা পড়ার পর সিদ্ধান্ত হয় শফিক ভাইকে হত্যা করা হবে। মাইকিং করে নদীর পাড়ে সেটা দেখার
জন্য লোকদের আহবান করা হয়। রাশেদ, ইবু, আশরাফ, ফজলু মিলে সিদ্ধান্ত নেয় হাসপাতাল থেকে
শফিক ভাইকে উদ্ধার করবে। হাসপাতালের ডাক্তারকে প্ল্যানটা বলার পর রাজি হন না তিনি।
ভেতরে ভেতরে অবশ্য কাজ ঠিকই করেন। সব সাজিয়ে রাখেন প্ল্যান অনুযায়ী। শফিক ভাইকে উদ্ধার
করে তারা।
যুদ্ধ ক্রমশ দানা বাঁধতে থাকলে দীলিপরা আগেই চলে যায় দেশ ছেড়ে ইন্ডিয়ায়, তাদের বাড়িঘর
দখল ও লুটপাট করে নেয় মিলিটারি ও রাজাকাররা। এরপর একে একে আশরাফ, ফজলুরাও চলে যায়।
অরু আপাদের সাথে ইবুরাও চলে যায় গ্রামের দিকে। রাশেদ একা হয়ে যায়। খুব কষ্টে ইবুকে
বিদায় জানায়।
একদিন যুদ্ধ শেষ হয়, দেশটাও স্বাধীন হয়। ইবুরা বাহাত্তরের জানুয়ারিতে শহরে ফিরে আসে।
ফিরে দেখে তাদের বাড়িতে কিছুই নাই, সব তছনছ করে দিয়েছে মিলিটারিরা। রাস্তঘাট, ব্রিজ
সব শেষ করে দিয়ে গেছে। ফজলু, আশরাফরা আগেই ফিরে এসেছে। বন্ধুরা আবার একসাথে হয়। ইবু
জানতে চায় রাশেদের কথা। জানতে পারে রাজাকার আজরফ ডিসেম্বরের দুই তারিখ অস্ত্রসহ হাতেনাতে
ধরে ফেলে রাশেদকে। নদীর পাড়ে গুলি করে মারা হয় তাকে। কষ্টে স্তব্ধ হয়ে যায় ইবু। দেশ
স্বাধীন হওয়ার আনন্দ মিলিয়ে যায় প্রিয় বন্ধুকে হারানোর বেদনায়।
সংক্ষেপে এই হলো আমার বন্ধু রাশেদ উপন্যাসের মূল কাহিনী। ৯০ দশকে প্রথম প্রকাশিত বইটি
লিখেছেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল, প্রকাশ করেছে কাকলী প্রকাশনী। বর্তমানে রকমারিতে বইটির
যে সংস্করণ পাওয়া যায় এটি ২৮তম সংস্করণ, সেটাও অবশ্য ২০১৫ সালে প্রকাশিত। হয়তো আরও
সংস্করণ বের হয়ে থাকতে পারে। বইটির জনপ্রিয়তা এখান থেকেই অনুমেয়।
মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখক পরিচয় মূলত দুটো বিষয়ে। প্রথমত উনি শিশু-কিশোরদের উপযোগী
ফিকশন লেখেন, দ্বিতীয়ত সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে দুই সপ্তাহ অন্তর অন্তর কলাম লেখেন। তবে
তার কলামের চেয়ে শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা বইগুলো অনেক বেশি জনপ্রিয়। যে বইগুলো তাকে
বাংলা সাহিত্যের বেস্ট সেলার লেখকদের তালিকায় অন্যতম একজন হিসেবে জায়গা করে দিয়েছে।
এবার মূল বিষয়ে আসি। মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে বাংলাদেশে অসংখ্য উপন্যাস লেখা হয়েছে।
কিন্তু শিশু-কিশোর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কাজ হয়েছে খুবই কম। এক্ষেত্রে আমার বন্ধু রাশেদ
একটি অনবদ্য সংযোজন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ত্রিশ লাখ শহিদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা একটি দেশ
পেয়েছি। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তান। সবাই এসব কথা জানি। কিন্তু প্রথাগত
মুক্তিযোদ্ধাদের বাইরেও এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আরও অসংখ্য মানুষ নিজেদের নিয়োজিত
করেছিলেন, জীবন দিয়েছিলেন। তার মধ্যে যেমন অনেক নারীও আছেন, আছে অসংখ্য শিশু-কিশোরও।
আমার বন্ধু রাশেদ মূলত সেসবেরই মৌলিক উপাখ্যান।
রাশেদ হাসান নামের কিশোরটি রাজনীতি-সচেতন ছিলো বরাবরই। দেশের সাথে বৈষম্য তার ভালো
লাগত না কখনোই। ফলে সে সবসময়ই চাইত দেশটা স্বাধীন হোক। তাই যখন যুদ্ধ শুরু হয় সে আর
চুপ থাকতে পারেনি। ছোট মানুষ, কিন্তু বিরাট সাহস ছিলো তার। বড়দের মত চিন্তা করার ক্ষমতা
আল্লাহ তাকে দিয়েছিলেন। ফলে সে তার বন্ধুদের নিয়ে যতভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করা
যায়, করেছিল। বন্ধুরা সিদ্ধান্তহীনতায় থাকলে সে বলেছিল 'এরকম সময়তো আগে কখনও আসেনি।
কেউ জানে না কী করতে হবে। বড়রাও জানে না, ছোটরাও জানে না। তাই আমাদের যেটা ঠিক মনে
হবে সেটাই করতে হবে'। তার এমন পরিণতবোধের কথা শুনে অবাক হয় বন্ধুরা। যুক্তি মেনেও নেয়।
ফলে সবাই মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করতে উদ্ধুদ্ধ হয়।
একদিকে রাশেদ পরিণত, অন্যদিকেও শিশুসুলভ মনটাও আছে তার। যেমন শফিক ভাইকে সাহায্য করতে
যেতে বন্ধুকে আগ্রহী করলেও তার ভেতরে ভয় কাজ করে। ইবুকে বলে 'ভেবেছিলাম তুই যাবি না,
তাই আমিও যাব না। কিন্তু এখন যেতে হবে'। ইবু জানতে চায় 'তুই যেতে চাসনি?' রাশেদ জবাব
দেয় 'ভয় করে, তবু যেতে হবে'।
শুধু তাই নয়, শিশুসুলভ দুষ্টামিও ছিলো তার মধ্যে। যেমন রাজাকার আজরফ আলী মুক্তিযোদ্ধাদের
নামে ভুয়া চিঠি লিখে ভয় দেখানো, রাস্তায় শার্ট দিয়ে মাথা ঢেকে ভয় দেখিয়ে মজা নেয়া এসবও
করে। মোটকথা রাশেদ চরিত্রটা বুদ্ধিতে পরিণত একজন কিশোরের চরিত্র।
রাশেদ চরিত্রের অন্যতম উপাদান হলো 'জনতার মাঝে নির্জনতা'। সবার সাথে মেশে সে, দিনশেষে
একা। তার পরিবারের কথা তেমন উল্লেখ নেই উপন্যাসে। শুধু জানা যায় তার বাবা পাগল কিসিমের
লোক, চমচম নামের এক বড়িভাই আছে তার। সে ইবুকে তার পরিবারের কথা বলতে চায়। ইবু শহর ছেড়ে
চলে যাওয়ার আগে তাকে বলে 'তুই আমার বন্ধু হবি?', ইবু অবাক হয়ে জানতে চায় 'কেন, আমি
তোর বন্ধু নই?', রাশেদ আবার বলে, 'একেবারে প্রাণের বন্ধু। সারা জীবনের বন্ধু। মরে গেলেও
যে বন্ধু থেকে যায়, সেই বন্ধু, হবি?'। ইবু সায় দেয়। রাশেদ খুশি হয়ে বলে 'আমার কোনো
প্রাণের বন্ধু নেই- মানে আগে ছিলো না। যাকে সবকিছু বলা যায়'। ইবু জানতে চায় সবকিছু
কী? রাশেদ বলে, 'কতকিছু বলা যায়। তুই কি আমার সবকিছু জানিস? আমি কে? আমার বাবা কী করে?
কিছু জানিস?'। সেদিনই রাশেদ প্রথমবার তার পরিবার নিয়ে বলতে চায়। পরে যদিও বলে না কিছুই।
পাঠক হিসেবে এই একটা আক্ষেপ থেকে যায়।
রাশেদকে যেদিন মারা হয় সেদিনের বর্ণনাও খুব বেশি পাওয়া যায় না। রাজাকার আজরফ তাকে ধরে
ফেলে। তার ব্যাগে ছয়টা গ্রেনেড পায়। এরপর নদীর ঘাটে দাঁড় করিয়ে হত্যা করে। আজরফের সহযোগী
রাজাকার বলেছিল, 'হুজুর বাচ্চা মানুষ, ছেড়ে দেন'। আজরফ বলে 'বড় হয়ে সাঁপের বাচ্চা সাঁপই
হয়' বলেই গুলি করে। কিশোর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ হত্যার বর্ণনায় এরচেয়ে বেশি কিছু পাওয়া
যায় না বইয়ে।
তবে প্রিয় বন্ধু ইবু রাশেদের সাথে কল্পনায় কথা বলে, রাশেদের কাছে জানতে চায়- 'তোকে
যখন গুলি করেছিল তখন খুব ব্যথা লেগেছিল না?' রাশেদ বলে 'অনেক ব্যথা'। রাজাকার আজরফ
আলী যখন তাকে কলমা পড়তে বলে তখন তার অনুভূতিটা শূন্য হয়ে যায়। মনে হয় এই সুন্দর পৃথিবীটা
তার আর দেখা হবে না!
রাশেদ ছাড়াও এই উপন্যাসে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলো ইবু, দিলীপ, আশরাফ, শফিক ভাই, অরু
আপা। দিলীপ ইবুর প্রতিবেশী, একই ক্লাসে পড়ে। যুদ্ধের সময় যখন আওয়ামীলীগের সাথে হিন্দুদেরও
মারা হচ্ছিল বেছে বেছে, তখন দিলীপরা দেশ ছেড়ে যায়। ইবুর বাবার কাছে বাড়ির দলিল দিয়ে
কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ছাড়েন দিলীপের বাবা। দিলীপও কাঁদে অনেক। ইবুকে বলে 'আমরা আজ থেকে
বাস্তুহারা হয়ে গেলাম রে'। ইবু বাস্তুহারা কী বোঝে না। প্রশ্ন করে দিলীপকে। সে বলে,
যাদের বাড়িঘর নেই তারাই বাস্তুহারা। আবার বলে 'আমি দেশ ছাড়তে চাই না। কিন্তু আমাদের
মেরে ফেলবে ওরা। জানিস, আমরা মুসলমান নাম নিয়ে যাচ্ছি। বাবা আমাদের সবার একটা করে মুসলমান
নাম ঠিক করে দিয়েছে। আমার নাম আমিই ঠিক করেছি। রকিবুল হাসান'। ইবুর তখন মনে হয় রকিবুল
হাসান তো তার ভালো নাম।
শফিক ভাই ও অরু আপা দুজন-দুজনকে পছন্দ করত। শফিক ভাই মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেয়, অরু আপা
চলে যায় গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের পরে তাদের বিয়ে হয়। তারা সিদ্ধান্ত নেয় তাদের ছেলে হলে
নাম রাখবে রাশেদ হাসান। ইবু অবশ্য নিজেও মনে মনে ভাবে, বড় হয়ে বিয়ে করলে তার সন্তানের
নামও রাশেদ রাখবে। তবে কল্পনায় রাশেদ তাকে বলে দেয় যেন লাড্ডু রাখে।
পুরো উপন্যাসে রাশেদ চরিত্রটির শক্তিশালী উপস্থিতি ও দেশের প্রতি তার ডেডিকেশন দারুণভাবে
ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। উপন্যাসটি শেষ করার পরও তাই ঘোর কাটে না পাঠকের। বারবার পড়তে
ইচ্ছে করে। কিছু কিছু বই থাকে অসংখ্যবার পড়লেও খারাপ তো লাগেই না, উল্টো আগ্রহটা থেকেই
যায়। আমার বন্ধু রাশেদ তার মধ্যে অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে এই উপন্যাসটি প্রজন্মের
পর প্রজন্মকে চেতনার ইঞ্জিনে গভীর জ্বালানি দিয়ে যাবে সেটা বলাই যায়। এখানেই একজন লেখকের
স্বার্থকতা, এখানেই একজন সফল লেখকের পরিচয়।
0 মন্তব্যসমূহ