শহিদ রুমিঃ ক্র‍্যাকপ্লাটুনের অকুতোভয় বীর

 


১৯৭১ সালের ২৫শে আগস্ট। একাত্তরের দুঃসাহসী যোদ্ধা দল ক্র‍্যাকপ্লাটুনের সদস্যরা ঢাকায় পরিচালিত করেন এক বীরত্বপূর্ণ অপারেশন। যার নাম ইতিহাসে 'ধানমণ্ডি অপারেশন' হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। যে অপারেশনে অংশ নিয়েছিলেন রুমি (শহিদ জননী জাহানারা ইমামের সন্তান শাফি ইমাম রুমি বীর বিক্রম), কাজী (কাজী কামালউদ্দিন বীর বিক্রম), বদি (শহীদ বদিউল আলম বীর বিক্রম), স্বপন (কামরুল হক স্বপন বীর বিক্রম) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল আলম বীরপ্রতীক। আর ধানমণ্ডির অপারেশনটিই ছিল ওই গেরিলা দলের শেষ অপারেশন। তবে শহিদ আবদুল হালিম চৌধুরী (জুয়েল) সিদ্ধিরগঞ্জ অপারেশনে আঙুলে গুলির আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় ঐ অভিযানে শেষ পর্যন্ত অংশ নেননি।

অসাধারণ বীরত্ব দেখিয়ে সেই অপারেশনে অনেকগুলো পাক আর্মিকে নিশ্চিহ্ন করে দেন ক্র‍্যাকপ্লাটুনের মুক্তিযোদ্ধারা। সেদিন বেশকিছু পাকিস্তানি সেনা হত্যার পর পাকিস্তানি আর্মিদের একটি জিপ তাদের অনুসরণ করলে রুমি তার স্টেনগানের বাঁট দিয়ে গাড়ির পেছনের কাঁচ ভেঙে ফায়ার করে আর্মির চালককে গুলিবিদ্ধ করেন। এর ফলে পাক আর্মির জিপটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে পড়ে যায়। রুমির সেই চমৎকার সাহসিকতা ও
 প্রত্যুৎপন্নমতিতার জন্যই সেদিন তার সহযোদ্ধাদের জীবন রক্ষা পেয়েছিল।

এটাই ছিলো শহিদ রুমির শেষ অপারেশন। ২৯শে আগস্ট পাক আর্মির হাতে ধরা পড়েন রুমি। সাথে ধরা পড়েন রুমির বাবা শরিফ ইমাম, ছোটভাই জামি, বন্ধু, চাচাতো ভাইসহ ক্র‍্যাকপ্লাটুনের দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম, মাসুদ সাদেক চুল্লু, আলতাফ মাহমুদ এবং তাঁর চার শ্যালক, আবুল বারক আলভী, আজাদ জুয়েল, বাশারসহ অনেকে। এমপি হোস্টেলে টর্চার সেলে নেওয়ার পর রুমি তার বাবা, ভাইকে বলেছিলেন, ‘তোমরা কেউ কিছু স্বীকার করবে না। তোমরা কেউ কিছু জান না। আমি তোমাদের কিছু বলিনি। ভয়ংকর অত্যাচারেও তখন একটি তথ্যও রুমির কাছ থেকে বের করা যায়নি।’

৫ সেপ্টেম্বর ইয়াহিয়া খান সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন, যেটা সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকের পছন্দ হচ্ছিল না। তাই ৪ সেপ্টেম্বর রাতে তাড়াহুড়ো করে শ'খানেক বন্দীকে গুলি করে মেরে ফেলে পাক আর্মি। ধারণা করা হয় রুমি সে রাতেই শাহাদাতবরণ করেন। ২৯শে আগস্টে ধরা পড়া অনেককে ছেড়ে দিলেও রুমিকে ছাড়া হয়নি। শরিফ ইমাম যখন ছাড়া পান তখন জিজ্ঞেস করেছিলেন রুমির কথা। কিন্তু ওরা বলেছিল রুমিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরদিন ছাড়া হবে। সেই পরদিন আর আসেনি। সরকারি কর্মকর্তা শরিফ ইমামকে অনেকে পরামর্শ দিয়েছিলেন ছেলের মুক্তির জন্য আবেদন করতে। কিন্তু তিনি করেননি। যাদের বিপক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে ছেলে বন্দী, তাদের কাছেই মুক্তি চেয়ে ছেলেকে ছোট করতে চাননি কখনোই।

রুমির মৃত্যুর নিশ্চিত তারিখ জানা না গেলেও জন্মতারিখ ২৯শে মার্চ। ১৯৫১ সালের এই দিনে শরিফ ইমাম ও জাহানারা ইমাম দম্পতির কোল আলো করে পৃথিবীতে আসেন রুমি। যার পুরো নাম শাফি ইমাম রুমি। বাবা বদলির চাকরি করতেন, সে সুবাদে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় দিনাজপুরে। এরপর বদলি হয়ে ঢাকায় এলে আজিমপুর কিন্ডার গার্টেন স্কুল, সেইন্ট গ্রেগরিজ স্কুল ও আদমজি ক্যান্টমেন্ট স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৮ সালে সেখান থেকেই স্টার মার্কস পেয়ে, পুরো পাকিস্তানে মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান লাভ করে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৭০ সালে এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। সেখানে ক্লাস শুরু হতে দেরি হওয়ায় বিভাগীয় প্রধানের অনুমতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ক্লাস করেন। পাশাপাশি আমেরিকার ইলিনয় স্টেটের শিকাগো শহরে ইলিনয় ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (IIT) ভর্তি হন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে সেখানে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই শুরু হলো পাকিস্তানি বাহিনীর নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত গণহত্যা।

মহাকবি মওলানা জালালুদ্দিন রুমির মত জ্ঞানী ও দার্শনিক হবেন ভেবে মা নাম রেখেছিলেন রুমি। ছোটবেলায় ছিলেন বইয়ের পোকা। মা তার বইপড়ায় আগ্রহ দেখে একটা শেলফ কিনে দিয়েছিলেন। সেখানে মনের খুশিতে বই জমাতেন। সেইসাথে গান, আবৃত্তি, বিতর্কেও ছিলেন দারুণ প্রতিভাবান। জুডোও শিখেছিলেন, পেয়েছিলেন ব্রাউন বেল্ট। ‘ইউনিভার্সিটি অফিসার্স ট্রেনিং কোর’-এ সার্জেন্ট হয়েছিলেন নিজের মেধা আর দক্ষতার মিশেলে। অল্প বয়সেই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সবার মন জয় করে নিয়েছিলেন।

শৈশব, কৈশোরে অনেক মেধাবী ও দুরন্ত কিশোর রুমি তারুণ্যে এসে যখন দেখলেন মাতৃভূমির প্রতি বৈষম্য, জুলুম আর গণহত্যা চলছে, তখন সিদ্ধান্ত নিলেন যুদ্ধে যাবেন। একদিকে তার সামনে আমেরিকার নিরাপদ ও উন্নত জীবনের হাতছানি, অন্যদিকে দেশমাতৃকাকে মুক্ত করার চিন্তা। এমন অবস্থায় ক'জন পারবেন প্রথমটি ছেড়ে দ্বিতীয়টি বেছে নিতে? রুমি পেরেছিলেন। সিদ্ধান্ত নিয়ে মায়ের কাছে অনুমতি চাইতে যান। মা আঁতকে ওঠেন, এইটুকুন ছেলে যুদ্ধের কী বোঝে! কিন্তু অদম্য রুমি পালিয়ে না গিয়ে মাকে বোঝান- ‘আম্মা, দেশের এই অবস্থায় তুমি যদি আমাকে জোর করে আমেরিকায় পাঠিয়ে দাও, আমি হয়তো যাব শেষ পর্যন্ত; কিন্তু তাহলে আমার বিবেক চিরকালের মতো অপরাধী করে রাখবে আমাকে। আমেরিকা থেকে হয়তো বড় কোনো ডিগ্রি নিয়ে এসে বড় ইঞ্জিনিয়ার হব; কিন্তু বিবেকের ভ্রুকুটির সামনে কোনো দিনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না। তুমি কি তাই চাও, আম্মা?
মা ছেলের শক্ত যুক্তির কাছে হার মেনে বললেন, ‘দিলাম তোকে দেশের জন্য কোরবানি করে। যা, তুই যুদ্ধে যা।’

যুদ্ধে গেলেন রুমি। দুইবারের চেষ্টায় ভারতের মেলাঘরের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যেতে পারেন তিনি। সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ ও সাব-কমান্ডার রশিদ হায়দার ছিলেন সে ক্যাম্পের দায়িত্বে। তার চিরকালীন তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, অকুতোভয় মনোভাব, উপস্থিত বুদ্ধি, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, দায়িত্ববোধ, অগ্রজদের প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রবল ব্যক্তিত্ববোধ ইত্যাদি গুণাবলী দেখে মেলাঘরের মুক্তিযোদ্ধা, মেজর, ডাক্তার, ক্যাপ্টেনসহ অনেকেই মুগ্ধ হন, প্রশংসায় তাকে আপ্লুত করেন। ভীষণ যত্নে বড় হওয়া মায়ের আদরের ছেলেটি অর্ধাহারে-অনাহারে, বনে-জঙ্গলে, ধুলাবালি আর কাদামাটি গায়ে মেখে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ।

মেলাঘরের ট্রেনিং যখন শেষের দিকে, একদিন সন্ধ্যায় রুমি মেজর আখতারকে হুট করে বলে বসেন- ‘চলেন আখতার ভাই, কিছু পাইক্কা মাইরা আসি!’ তার প্রস্তাবে মেজর আখতার স্বাভাবিকভাবেই হচকচিয়ে যান। কিন্তু অন্যান্য যোদ্ধারা হৈহৈ করে ওঠে। তারাও পাকিস্তানি মারতে যেতে চান। সিদ্ধান্ত হয় যাওয়ার। ঠিক হলো মেজর আখতার, রুমি, বাহার, জামাল, তাহের আর অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার জাহেদ আলী যাবে সেদিনের অপারেশনে। সাথে যোগ হয় শামসুদ্দিনও। রাত এগারোটায় বের হয়ে বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করে দলটি। এরপর সকালের দিকে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অপারেশন চালানো হয়। কিছু বাংকার উড়িয়ে দিয়ে কয়েকজন পাকিস্তানি আর্মিকে শেষ করা হয়, উদ্ধার করা হয় নির্যাতিত মেয়েদেরও। এরপর সকাল নয়টার দিকে মেলাঘরের ক্যাম্পে ফিরে যান তারা।

মেলাঘরে গিয়ে মেজর আখতার অভিযানের রিপোর্ট করলেন দুপুরে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং দুই নম্বর সিচুয়েশন রিপোর্টে খবরটা সম্প্রচারিত হয়ে গেল সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে। ঘটনা শুনে তো দুই নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ কটমটে চেহারায় চেয়ে রইলেন। তার প্রিয় শিষ্যদের না পারেন বকতে, না পারেন সইতে। যে কোন মুহূর্তে প্রাণ হারাতে পারত যে কেউ। আজব ছেলেপেলে সব, পাগল একেকটা, নাহলে কি আর এমন করে!

এদিকে 'দুর্ধর্ষ' পাকিস্তানি সৈন্যরা বাচ্চা বাচ্চা ছেলেপেলের হাতে এমন নাস্তানাবুদ হওয়ার খবর শুনে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরার দশা সবার। মেজর নুরুল ইসলাম শিশু সেদিন ওই সেক্টরে ছিলেন। হাসতে হাসতে আখতারকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা, তোমাগোর জানে কোনো ভয় নাই? পাগলামির তো একটা লিমিট আছে মিয়া, এইসব কি করো তোমরা?’ আখতার মাথা চুলকে জবাব দেন, ‘ইয়ে মানে স্যার, বসে থাকতে থাকতে হাত পায়ে জং ধইরা গেছিল তো, এই একটু ব্যায়াম কইরা আসলাম আর কী!’

এমন সাহসিকতায় ভরা যোদ্ধারাই ছিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধে। শহিদ রুমি ছিলেন তার অন্যতম। যিনি অল্প কিছুদিন যুদ্ধ ও অপারেশন করেও অসীম বীরত্বের জন্য ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। স্বাধীনতার পর পেয়েছেন বীর বিক্রম উপাধিও। রুমির সহযোদ্ধা হাবিবুল আলম বীর প্রতীক যেমন তার সম্পর্কে বলেন, ‘রুমি খুব বেশিদিন যুদ্ধের সাথে জড়িত থাকতে পারেনি। সে ঢাকা থেকে রওনা করেছিল জুন মাসের মাঝামাঝি, ট্রেনিং শেষ করে ঢাকা আসে আগস্ট মাসে। কিছু অ্যাকশনের সাথে জড়িত থাকার পর ২৯শে আগস্ট সে পাকিস্তান আর্মির হাতে ধরা পড়ে যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা কতগুলো অ্যাকশন করেছে, সেটা বড় কথা নয়। যদি একটি অ্যাকশনে সে সাহস এবং বীরত্ব দিয়ে সফল হতে পারে, সেটাই বড় কথা। রুমি ঢাকার অ্যাকশনে অনেক বেশি সাহসের পরিচয় দিয়েছিল।’

রুমির সাহসিকতা আর দেশকে মুক্ত করার জন্য কতটা জেদ ছিল তার প্রমাণ পাওয়া একাত্তরের জুন মাসে ভারতের আগরতলা থেকে মামাকে লেখা একটি চিঠি থেকে। সেখানে একটা অংশে তিনি লিখেন- “আমরা একটা ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ লড়ছি। আমরা জয়ী হব। আমাদের সবার জন্য দোয়া কোরো। কী লিখব বুঝতে পারছি না- কত কী নিয়ে যে লেখার আছে। নৃশংসতার যত কাহিনি তুমি শুনছ, ভয়াবহ ধ্বংসের যত ছবি তুমি দেখছ, জানবে তার সবই সত্য। ওরা আমাদের নৃশংসতার সাথে ক্ষতবিক্ষত করছে, মানব-ইতিহাসে যার তুলনা নেই। আর নিউটন আসলেই যথার্থই বলেছেন, একই ধরনের হিংস্রতা নিয়ে আমরাও তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ব। ইতিমধ্যে আমাদের যুদ্ধ অনেক এগিয়ে গেছে। বর্ষা শুরু হলে আমরা আক্রমোণের তীব্রতা বাড়িয়ে দেব।’’

ধরা পড়ার আগের দিন রুমি বাড়িতে আসেন। মায়ের কোলে শুতে গেলেন। জাহানারা ইমাম হাত বাড়িয়ে রুমির মাথাটা বুকে টেনে বললেন, ‘রুমি, এত কম বয়স তোর, পৃথিবীর কিছুই তো দেখলি না। জীবনের কিছুই তো জানলি না।’
রুমি মুখ তুলে কী একরকম যেন হাসলেন। মনে হলো অনেক বেদনা সেই হাসিতে। একটু চুপ করে থেকে বললেন, ‘বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন একটা কথা আছে না আম্মা? হয়তো জীবনের পুরোটা তোমাদের মতো জানি না, ভোগও করিনি, কিন্তু জীবনের যত রস-মাধুর্য, তিক্ততা-বিষ—সবকিছুর স্বাদ আমি এর মধ্যেই পেয়েছি আম্মা। যদি চলেও যাই, কোনো আক্ষেপ নিয়ে যাব না।’

রুমি আক্ষেপ নিয়ে যাননি। দেশের তরে হাসতে হাসতে জীবনটা বিলিয়ে দিয়েছেন। আমেরিকার উন্নত জীবনের হাতছানি ছেড়ে দিয়ে কজনই বা পারেন দেশের জন্য এমন আত্মত্যাগ করতে!

আজ বেঁচে থাকলে রুমির বয়স হতো উনসত্তর। এই বয়সে হয়তো একজন প্রবীণ প্রকৌশলী হিসেবে দেশকে গড়ার জন্য কাজ করে যেতেন, নয়তো অর্থনীতিবিদ হিসেবে দেশের অর্থনীতিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতেন। কিন্তু রুমি বেঁচে নেই। বিশ বছর বয়সেই দেশের জন্য প্রাণটা বিলিয়ে দিয়ে তার বয়সটাকে ধরে রেখেছেন, সবার কাছে একজন চিরতরুণ হিসেবে অমরত্বের পথে হেঁটেছেন। রুমি মানেই তাই তারুণ্যের দীপ্তিমান আলোতে উজ্জ্বল এক অকুতোভয় সৈনিক।

বিচারঃ নব্বইয়ের দশকে শহিদ জননী জাহানারা ইমাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন, তৎকালীন সরকারের কাছে দাবি জানান বিচারের। অথচ সে সময় উল্টো তাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দেয়া হয়। কিন্তু তিনি দমে যাননি, দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে গড়ে তোলেন গণআদালত। সেখানেই প্রতিকীভাবে ফাঁসি দেয়া হয় একাত্তরের ঘাতকদের।

২০০৯ সালে সরকার উদ্যোগ নেয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের। গ্রেফতার করা হয় ঘাতকদের। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলে বিচারকাজ। ২০১৩ সালে একটি রায়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে গণজাগরণ। আইন সংশোধন করে রায় হয় একের পর এক ঘাতকের। ২০১৩ সালের ১৭ই জুলাই
 আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা, রুমিসহ অন্যান্যদের হত্যা ও নির্যাতনের মোট উত্থাপিত ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টিতে দোষী প্রমাণিত হয়। এর মাঝে দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। আপিল ও রিভিউর পর ২২শে নভেম্বর-২০১৫ সালে তার ফাঁসি কার্যকর হয়।

জাদুঘরঃ ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘরে শহিদ রুমির অসংখ্য স্মৃতিচিহ্ন সযত্নে রাখা রয়েছে। তার ব্যবহৃত জিনিষপত্র, এয়ারগান, চিঠিপত্র ও যুদ্ধকালীন অনেক স্মৃতিই দেখা যায় জাদুঘরটিতে। ২০০৭ সালে চালু হওয়া জাদুঘরটি প্রতি বছর পরিদর্শন করেন অসংখ্য মানুষ। প্রতি শনিবার সকাল ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সেখানে প্রবেশ করা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় দিবসেও খোলা হয় জাদুঘরটি। কোনো প্রবেশ ফি ছাড়াই সেখানে প্রবেশ করা যায়। সম্পূর্ণ ব্যক্তি-উদ্যোগে তৈরি জাদুঘরটি কালের সাক্ষী হয়ে রুমিদের বীরত্বের প্রমাণ দিয়ে যাবে যুগের পর যুগ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ