ঝুলন্ত লাশ


আবারও খুন! কিন্তু এ কী করে সম্ভব। তিনজন লোক দু’সপ্তাহের ব্যবধানে একইভাবে খুন হলো। এভাবে চলতে থাকলে তো এই দ্বীপ লোকশূন্য হয়ে পড়বে- কথাগুলো বললেন চেয়ারম্যান আফজাল চৌধুরী।

একটি লাশকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে শত শত দ্বীপবাসী। সঙ্গে রয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও থানার ওসি। লাশটা এ দ্বীপেরই। দিনমজুর কবির আলির। লোকটাকে মারা হয়েছে অদ্ভুত এক কায়দায়। তা হলো তিনটি মোটা রশি দিয়ে তিনটি গাছের সাথে অ্যাডজাস্ট করে ফাঁসির দড়ির মত তৈরি করে লোকটার দম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অবশ্য গত পনের দিনের ব্যবধানে একই কায়দায় আরও দুজন লোককে হত্যা করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চলছে নানা গুজব। আজ লাশ দেখতে এসে গুজবগুলো আরও প্রখর হয়েছে। যেমন কেউ কেউ বলছে এটা জিনের কাজ, কেউ বলছে ভুত ছাড়া এই কাজ কেউ করতেই পারে না, কেউ নানা ষড়যন্ত্র-তত্ত্বও হাজির করছে। তাদের সবাইকে থামিয়ে দিয়ে ওসি সাহেব লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নিতে গাড়িতে তোলার নির্দেশ দিতে দিতে বললেন ‘পনেরো দিনের ব্যবধানে তিন তিনটি ঝুলন্ত লাশ। এ নিশ্চয়ই ভয়ঙ্কর কোনো অপরাধী অথবা অপরাধীচক্রের কাজ। আমরা আপরাধীদের সনাক্ত করতে সাধ্যমত চেষ্টা করব। এবার তাহলে আসি চেয়ারম্যান সাহেব’এমন সময় ফাহিম নামের একটা ছেলে বলল, স্যার একটা কথা বলব?

-ঠিক আছে, বলুন কী বলবেন?

-কথাটা হলো আপনি খেয়াল করেছেন কী না জানি না, প্রতিটি খুনই করা হয়েছে ত্রিকোণের মত তিনটি গাছ বেছে নিয়ে, একদম একই স্টাইলে। তাতে বোঝা যায় খুন তিনটি একই সূত্রে গাঁথা। আশা করি আপনারা বিষয়টা মাথায় রাখবেন।

-ধন্যবাদ আপনাকে। এই ব্যাপারটা আমরাও খেয়াল করেছি। আশা অরি এবার অপরাধীকে ধরতে পারব- বলেই তিনি জিপে করে লাশ নিয়ে চলে গেলেন।

ফাহিম শহরের ছেলে। এখানে সে বেড়াতে এসেছে। ফাহিমের বাবা এখানকার চেয়ারম্যান আফজাল চৌধুরীর বাল্যবন্ধু। তাই সে চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়িতেই ওঠেছে। তার সাথে এসেছে তার বন্ধু জাহিদ। ফাহিম ও জাহিদ সদ্য কৈশোর পেরোনো টগবগে দুই তরুণ। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস আর রঙিন স্বপ্নে বিভোর তারা। সাথে আছে অসীম সাহস আর উদ্যম শক্তি। দ’জনেই ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়ে বেড়াতে এসেছে। থাকবে একমাস। ইতোমধ্যেই পনের দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। এরই মধ্যে ঘটে গেছে খুন তিনটির ঘটনা। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই ঝুলন্ত লাশের পেছনের কারিগরদের ধরতে পুলিশকে সহায়তা করবে।

দুই. 

কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার দ্বীপটির নাম সোনাদিয়া। এ দ্বীপের উপকূলে বাস করে শত শত গ্রামীণ পরিবার। অপরূপ এই দ্বীপটির উপকূল ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে বৃহৎ এক বনাঞ্চল। এই বনাঞ্চলকে কেন্দ্র করেই আবর্ত হয় হাজার হাজার মানুষের জীবন ও জীবিকা। এখানকার দিন মজুরেরা কেউ কেউ জঙ্গল থেকে মৌচাকের মধু সংগ্রহ করে বিক্রি করে সংসার চালায়। আবার অনেকে জঙ্গলের পরিত্যক্ত কাঠ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। যে তিনজন লোক খুন হয়েছে তাদের প্রথম দু’জন কাঠ বিক্রি করে এবং পরেরজন মধু সংগ্রহ করে সংসার চালাত।

পরদিন সকালেই ফাহিম ও জাহিদ তদন্তে নেমে গেল। তারা প্রথমেই খুন হওয়া তিনজনের বাড়ির লোকেশন জেনে প্রথমজন আবদুল হালিমের বাড়িতে গেল। বাড়িতে তার নবম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে শিহাব ও তার স্ত্রী ছিল। ওদেরকে দেখে শিহাব বেরিয়ে এসে বলল, আপনারা কারা? ঠিক চিনতে পারলেম না!

-আমি ফাহিম আর ও হলো জাহিদ। আমরা শহর থেকে এখানে বেড়াতে এসেছি। আমরা তোমার বাবার খুনের ব্যাপারে পুলিশকে সাহায্য করছি। এ জন্য তোমার কাছ থেকে কিছু তথ্য জানতে এসেছি।

-ও তাহলে আপনারা গোয়েন্দা? বিস্ময়াভিভূত হয়ে প্রশ্ন করে শিহাব।

-অনেকটা সেরকমই। তবে শখের গোয়েন্দা- বলল ফাহিম।

-বুঝেছি। ঠিক আছে এবার যা জানতে চান বলুন।

-জাহিদ বলে, তোমার বাবা যেদিন খুন হন সেদিন তুমি কি বাড়িতে ছিলে?

-হ্যাঁ ছিলাম।

-খুন হওয়ার দিন তার মধ্যে কি কোনো অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করেছিলে?

-কিছুক্ষণ মাথা চুলকিয়ে শিহাব বলল , হ্যাঁ, মনে পড়েছে। সেদিন জঙ্গল থেকে হন্তদন্ত হয়ে প্রায় সন্ধ্যার দিকে ফিরে এসে ঘরের দরজার লাগিয়ে বাবা মাকে বলেছিলেন, কেউ ডাকলে যেন মা দরজা না খোলেন। এরপর ভোররাতে মা আমাকে ডেকে তুলে বলেন, শিহাব তোর বাবা তো ঘরে নেই। আমি বললাম, দেখো কোথায় গেছে হয়তো। মা বললেন বাড়ির আশেপাশে খুঁজে দেখেছি, কোথাও নেই। তখন আতঙ্কিত হয়ে সারা গ্রাম খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে জঙ্গলের কাছে গিয়ে দেখি বাবা গাছে ঝোলানো। কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেলল শিহাব। তাকে সান্ত্বনা দিতে দিতে ফাহিম বলল, তুমি কেঁদো না শিহাব। আমাদের ওপর ভরসা রাখো। আশা করি তোমার বাবার খুনিকে খুঁজে বের করতে পারব। আর আপাতত তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না। এবার আমরা আসি।

এরপর তারা দ্বিতীয় খুন হওয়া নিতাই চন্দ্র ও গতকাল খুন হওয়া কবির আলির বাড়িও ঘুরে এল। এতে যে সব তথ্য পেল তা হলো, ঘটনার দিন অথবা আগের দিন তিনজনেই জঙ্গলে গিয়েছিল। অতঃপর ভীত-সন্ত্রস্থ হয়ে তারা ঘরে ফিরে আসে এবং সে রাতেই তারা খুন হয়ে যায়। এখন প্রশ্ন হলো কেন তারা ভয় পেয়েছিল এবং কেনই বা খুন হলো?

তিন. 

ফাহিম ও জাহিদ আজ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে খুন তিনটির তদন্ত করছে। এরই মধ্যে একই কায়দায় আরশাদ মিয়া নামে আরও একজন দিনমজুর খুন হয়ে গেল এবং তার বাড়িতে গিয়েও প্রায় একই তথ্য পেল তারা। চতুর্থ খুনের পর দ্বীপটিতে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করতে লাগল। কেউ ভয়ে জঙ্গলে ঢুকছে না। অজানা আতঙ্কে সবাই ঘরবন্দী হয়ে বসে আছে। যে জঙ্গলেই তাদের জীবন ও জীবিকা সেখানে না যেতে পারলে না খেয়ে মরা ছাড়া এই দ্বীপের মানুষ এবং তাদের পরিবারের আর কোনো উপায় থাকবে না। ফাহিম ও জাহিদ যা তথ্য পেয়েছে তাতে তাদের বিশ্বাস ঐ খুনগুলোর আসল মোটিভ জঙ্গলেই লুকিয়ে আছে। গভীর বনে একবার ঢুকতে পারলেই খুনগুলোর রহস্য উদঘাটন হয়ে যাবে বলে দুজনেই একমত তারা। এবং তারা সিদ্ধান্ত নেয় আগামিকালই জঙ্গলে ঢুকবে।

ওরা দুজন খুনের তদন্ত করছে জেনে চেয়ারম্যান সাহেব ওদেরকে ডেকে বললেন ‘তোমরা এখানে বেড়াতে এসেছ। আমি চাই না তোমরা এসব খুনের ঝামেলায় জড়িয়ে বিপদে পড়ো। কারণ তোমাদের কিছু হয়ে গেলে তোমাদের মা বাবার কাছে আমি কখনই মুখ দেখাতে পারব না’

ফাহিম মোলায়েম স্বরে বিনয়ের সাথে বলল ‘চাচা, আপনি আমাদের বিপদের কথা বলছেন। খুন হওয়া লোকদের কথা একটু ভাববেন না? তদন্ত করতে গিয়ে ঐ পরিবারগুলোর আহাজারি আর কান্না দেখে আমাদের বুকটা ফেটে যাচ্ছিল কষ্টে। তাই আমরা তাদের কথা দিয়েছি আসল খুনিদের ধরিয়ে দেব। তাছাড়া এভাবে চলতে থাকলে এই দ্বীপতো অচিরেই একটা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে সেটাও তো আপনার ভেবে দেখা উচিত। এমনিতেই লোকজন এখন ভয়ে জঙ্গলে যাওয় ছেড়ে দিয়েছে। তাদের ধারণা এসব জঙ্গলের কোনো জিন-ভুতের কাজ। এজন্য অনেক দিনমজুর এখন পরিবার নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। এ অবস্থার পরিবর্তন কি জরুরি নয়?

-কিন্তু বাবা, এসব করার জন্য তো পুলিশ রয়েছে।

-রয়েছে ঠিক, তবে এখনও কোনো কুল-কিনারা করতে পারেনি। কারণ খুনিরা জানে যে ওদের পেছনে পুলিশ লাগবেই। তাই তারা পুলিশ থেকে সবসময় সাবধানেই থাকবে। অপরদিকে আমরা তদন্ত করছি গোপনে। তাই সফল হওয়ার সম্ভাবনা আমাদেরই বেশি।

-ঠিক আছে বাবা, যা করার অতি সাবধানে করবে। আর কোনো বিপদের সম্ভাবনা দেখলেই আমাকে অথবা থানার ওসিকে ফোন করে জানাবে।

-চাচা, আমাদের আত্মরক্ষার কৌশল ভালোই জানা আছে। তবু সাবধানতা অবলম্বন করব। আর আপনার সাহায্য পেলে আশা করি কোনো সমস্যা হবে না আর।

-আমার পক্ষে থেকে সবধরনের সহায়তা পাবে।

চার. 

রাতে খেয়েদেয়ে ঘরে বসে ফাহিম ও জাহিদ আলাপ করছে কাল কীভাবে অপারেশনে বের হবে। হঠাৎ এক টুকরো কাগজ ঘরের মেঝেতে এসে পড়ল। ঘরের বাইরে চোখ বোলাতেই তারা দেখল একটা ছায়ামূর্তি দ্রুত জানালার পাশ থেকে সরে গেল। দৌড়ে বাইরে এল। কিন্তু ছায়ামূর্তিটাকে আর দেখা গেল না। ঘরে এসে কাগজটি হাতে নিয়ে দেখল একটা চিরকুট। জাহিদ চিরকুটটি পড়তে লাগল-

“ভালো চাও তো গোয়েন্দাগিরি ছেড়ে যেখান থেকে এসেছ সেখানে চলে যাও। নইলে কপালে খারাবি আছে”

পড়া শেষ করে জাহিদ বলল, তাহলে কী দাঁড়াল? আমরা যে তদন্ত করছি সেটা ওরা জেনে গেছে এবং হুমকি দিয়ে আমাদের তদন্ত থেকে বিরত রাখতে চাইছে। তারমানে আমরা সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছি। ঠিক আছে, আমরাও দেখব তোমরা কেমন করে পার পেয়ে যাও। শেষ কথাটায় প্রতিজ্ঞা যেন ঠিকরে বেরোলো জাহিদের চোখ থেকে।

পরদিন বিকেল চারটায় ওরা জঙ্গলে যাওয়ার জন্য রওনা হলো। যাওয়ার আগে চেয়ারম্যান সাহেবকে বলে গেল দু ঘন্টার ভেতরে ওরা ফিরে না এলে তিনি যেন পুলিশ নিয়ে জঙ্গলে যান।

সোনাদিয়া দ্বীপের গহীন অরণ্যে প্রবেশ করে ওরা অজানা এক আকর্ষণ অনুভব করতে লাগল। সবুজের সমারোহ, পাখ-পাখালির কলরবে মুগ্ধ হলেও সেসব নিয়ে এখন ভাবার সময় নেই। বরং প্রকৃতির গবেষণা না করে তাদের কাঙ্খিত লোকদের খুঁজতে লাগল। প্রায় ঘন্টাখানেক হাঁটার পর ওরা যখন ভীষণ অরণ্যে চলে গেল তখন দক্ষিণ দিক দিয়ে একটা শব্দ কানে এলো। শব্দের সূত্র ধরে এগোতে থাকলে। কাছাকাছি গিয়ে বুঝতে পারল এটা করাতের শব্দএবং এটাও বুঝতে সময় লাগল না যে এখানে কী করা হচ্ছে। শব্দের একেবারে কাছে গিয়ে তারা ঝোঁপের আড়াল থেকে দেখতে পেল বিশ-পঁচিশজন লোক করাত দিয়ে অনেকগুলো বড় বড় গাছ কাটছে। তাদেরকে কাজ দেখিয়ে দিচ্ছে কোমরে রিভলবারওয়ালা স্বাস্থ্যবান একজন লোক। কেটে কেটে একপাশে রাখা হয়েছে গাছের বিশাল এক স্তুপ। এসব অবলোকন করে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্বন্ধে ভাবছিল ফাহিম। হঠাৎ পেছন থেকে কে বলে ওঠল- খবরদার! নড়াচড়া করলে একেবারে গুলি করে মেরে ফেলব। অবাক হয়ে দু’জনে পেছনে তাকিয়ে দেখল উদ্ধত রাইফেল হাতে একজন কালো ও মোটা লোক তাদের এ কথা বলছে। তারপর লোকটা রাইফেলের নল ওদের কাঁধে রেখে ওদেরকে ভেতরে যেতে বাধ্য করল। বস, ওরা ঝোঁপের আড়াল থেকে আমাদের কাজ দেখছিল, তাই ধরে নিয়ে এলাম।

-ভালোই করেছিস। ওরাই হলো সেই দুই টিকটিকি, যারা আমাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছিল। ভীষণ সাহসী ছেলে দেখছি। হুমকি দিয়েও তদন্ত বন্ধ করাতে পারিনি। এবার বাছাধনদের দেখিয়ে দেব গোয়েন্দাগিরির মজাটা। তারপর লোকটা সাঙ্গপাঙ্গদের দুই গোয়েন্দাকে বাঁধার নির্দেশ দিয়ে বলল আমাদের কাজ শেষ করে যাওয়ার সময় ওদের হত্যা করে ফেলে যাব। এখন সবাই তাড়াতাড়ি কাজগুলো সেরে ফেলো।

ওদিকে দুই ঘন্টার বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ায় চেয়ারম্যান সাহেব চিন্তিত মনে থানায় গিয়ে ওসিকে সব ঘটনা খুলে বললেন। ওসি সাহেব বললেন, ‘আপনার এভাবে ওদেরকে একা জঙ্গলে যেতে দেয়া ঠিক হয়নি। তারপর পুলিশের একটি ফোর্স নিয়ে ওদেরকে খুঁজতে বেরোলেন। জঙ্গলে গিয়ে দেখলেন বিভিন্ন গাছের মধ্যে চক দিয়ে বড় করে ক্রস চিহ্ন আঁকা। ভাবলেন এটা বোধহয় কোন সংকেত। জাহিদ আর ফাহিমই জঙ্গলে ঢোকার সময় বুদ্ধি করে এসব ক্রস এঁকে গিয়েছিল যাতে ওরা হারিয়ে গেলেও পুলিশ এসে খুঁজে বের করতে পারে। ক্রস চিহ্নওয়ালা গাছগুলো ধরে একেবারে কাঠ চোরাচালানিদের আস্তানায় চলে গেল পুলিশের দলটি। গিয়ে দেখল ফাহিম ও জাহিদকে বেঁধে রেখে সব মাল ট্র্যাকে বোঝাই করছে কালপ্রিটরা। ওসি সাহেব আর পুলিশের দলকে দেখে এতই চমকাল স্মাগলারগুলো যে নড়ার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলল। সবাইকে হাতেনাতে ধরে ফেলা হলো। মুক্ত করা হলো দুই গোয়েন্দাকেও।

 

পাঁচ. 

চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ির বৈঠকঘরে বসে আছেন থানার ওসি, ফাহিম, জাহিদ এবং চেয়ারম্যান সাহেব নিজে। ওসি সাহেব ফাহিম ও জাহিদের দিকে তাকিয়ে বললেন তোমাদের অনেক ধন্যবাদ। তোমরা জটিল একটি কেসের সমাধান অতি সহজেই করে দিয়েছ। আশা করি তোমরা অবসর সময়ে গোয়েন্দাগিরির চর্চা করবে। তাহলে ভবিষ্যতে ভালো গোয়েন্দা হতে পারবে। এরপর চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, বলুন তো ওসি সাহেব আসামিদের কী সাজা হতে পারে?

-হ্যাঁ, ভালো কথা মনে করেছেন। আসলে ওরা দীর্ঘদিন ধরে কাঠ-চোরাচালানির সাথে জড়িত। ওদের গডফাদার হলো শহরের বিখ্যাত শিল্পপতি আরবাজ খান। ওদের দেয়া ইনফরমেশন অনুযায়ী তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশি রিমান্ডে সে সব দায় স্বীকার করেছে। ঐ খুন চারটির কথাও। অবশ্য খুনগুলো সে নিজহাতে করেনি। করেছে আমরা যাকে রিভলবারসহ জঙ্গলে গ্রেফতার করেছিলাম সেই রফিক উদ্দিন ও তার সহযোগীরা। সেও দোষ স্বীকার করেছে। তাদের সবারই কঠোর শাস্তি হবে বলে আমার বিশ্বাস।

-আচ্ছা, বলুন তো ওরা ঐ চারজন লোককে কেন হত্যা করল? ওদের তো কোনো দোষ ছিল না?

-আমার ধারণা ফাহিম কিংবা জাহিদ এই প্রশ্নের উত্তর আমার চেয়েও ভালোভাবে দিতে পারবে। কারণ এই ব্যাপারটা ওরাই তদন্ত করেছে।

-বাবা ফাহিম, বলো তো ব্যাপারটা কী?

-আসলে ব্যাপার হলো ওরা জঙ্গলে গিয়ে কোনো না কোনোভাবে কাঠ চোরাচালানি দলের কর্মকাণ্ড দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে আসে। সেটা জানতে পেরে স্মাগলাররা ওদেরকে ফলো করে বাড়ি চিনে যায়। তারপর ভোররাতে ওরা যখন প্রাকৃতিক কর্ম সারতে বাইরে যায় তখনই ধরে এনে হত্যা করে সবাইকেই প্রায় একই কায়দায় ঝুলিয়ে রাখে। উদ্দেশ্য ছিল খুনগুলো দেখে ভয়ে লোকজন জঙ্গলে যাওয়া ছেড়ে দেবে আর ওরাও কাঠ চোরাচালানি করে ওদের আখের গুছিয়ে নেবে। এমনকি আমরা তদন্ত করছি জেনে আমাদেরকেও চিঠি দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছিল।

-তাই নাকি? তাহলে হুমকির কথা আমাকে আগে জানাওনি কেন? চিঠিটা দাও, এটাও ওদের বিরুদ্ধে এভিডেন্স হিসেবে কাজ করবে।

-চিঠি দিতে দিতে ফাহিম বলল আসলে আমাদের কাজের কিছু প্রাইভেসি আছে, নিজস্ব ধারা আছে। সেগুলো বজায় রাখতেই হুমকির কথা বলিনি।

পরদিন বিকালে ফাহিমের বাবা হানিফ সাহেব তার বন্ধু চেয়ারম্যান আফজাল চৌধুরীর বাড়িতে এলেন। চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে কুশল বিনিময়ের পর ফাহিম ও জাহিদকে বললেন, তোমরা দারুণ একটি কেসের সমাধান করেছ। আজকের প্রায় সব পত্রিকাই তোমাদের প্রশংসা করে প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। পত্রিকায় সংবাদ দেখেই আমার এখানে যাত্রা। সেই সাথে তোমাদের দুজনের জন্যই আরেকটি সুসংবাদ আছে। সেটা হলো তোমরা দুজনেই এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পেয়ে পাশ করেছ। কালকেই রেজাল্ট দিয়েছে।

-ওহ, শিট। খুনের তদন্ত করতে গিয়ে তো রেজাল্টের কথা একদমই ভুলে গিয়েছিলাম! আনন্দের অতিশয্যে দুই গোয়েন্দা একসাথে বলে ওঠল হিপ হিপ হুররে!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ