অ্যান্ড্রু কিশোরঃ প্লেব্যাকের জাদুকর



"অ্যান্ড্রু কিশোর! একটি বিস্ময়কর দমের নাম, যে দম থেকে সুর বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে আকাশে বাতাসে নদীতে সাগরে এবং যেখানে যেখানে ছড়ায় তাদের সবাইকেই জড়ায় সুরের আরামদায়ক উষ্ণতায়।

তার কণ্ঠে কী আছে আমি কী করে বলি! গান শুনে খালি মনে হয় কোন দিক থেকে তরল সোনা গলে গলে পড়ছে। তাতে প্রেম অভিমান কান্না কটাক্ষ চিৎকার রাগ সব অলঙ্কারের কাজ করছে। রেকর্ডিং এর মেশিনের কাটা জানে অ্যান্ড্রু কিশোরের ভার ও ধার কী। ভয়ঙ্কর! যেন আস্ত নায়াগ্রা জলপ্রপাত একই সঙ্গে ভয়ঙ্কর ও সুন্দর"।

২০১৭ সালে অ্যান্ড্রু কিশোরের জন্মদিনে একজন খ্যাতিমান নারী শিল্পীর ফেসবুক স্ট্যাটাসের একটা অংশ ছিল এমনই। কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী অ্যান্ড্রু কিশোর প্লেব্যাকে যাদের সাথে সবচেয়ে বেশি গান গেয়েছেন, তাদের মধ্যে একজন রোমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা। উনিই এই স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলেন তাকে নিয়ে। ১৯৮৬ সাল থেকে দুজনে প্রচুর ছবিতে একসাথে কণ্ঠ দিয়েছেন। বাংলা সিনেমার গানকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।

আজ ৬ই জুলাই, দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে অবশেষে আজকেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা সংগীতের এক মহান কণ্ঠযোদ্ধা অ্যান্ড্রু কিশোর। চলচ্চিত্রের গান মানেই একসময় অ্যান্ড্রু কিশোরকে বোঝানো হতো। বাংলা চলচ্চিত্রে এমন 'হিরো'জ ভয়েস' আর দ্বিতীয়টি নেই এবং আসবেনও না এটা বলে দেয়াই যায়।

১৯৫৫ সালের ৪ঠা নভেম্বর রাজশাহীতে জন্ম হয় অ্যান্ড্রু কিশোরের। মা মিনু বাড়ৈ ও বাবা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ। মায়ের প্রিয় শিল্পী ছিল উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী কিশোর কুমার। তার নামের সাথে মিল রেখেই নাম রাখা হয় কিশোর, পুরো নাম ছিলো অ্যান্ড্রু কিশোর কুমার বাড়ৈ। যেটি সার্টিফিকেটেও আছে। কিন্তু চলচ্চিত্র পরিচালক দেওয়ান নজরুল ইসলাম মানুষের মনে রাখার সুবিধার্থে নামটি সংক্ষেপ করতে বললেন। এরপর থেকে সবাই তাকে অ্যান্ড্রু কিশোর নামেই চেনে।

মা ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা। পড়াতেন রাজশাহীর বুলনপুর মিশন গার্লস হাইস্কুলে। সেখানেই তার পড়াশোনা শুরু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ করেন প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা। সংগীতে হাতেখড়ি হয় রাজশাহীরই সংগীত-শিক্ষক আবদুল আজিজ বাচ্চুর হাতধরে। একসময় পা রাখেন রাজধানী ঢাকায়।

মুক্তিযুদ্ধের পর রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে রবীন্দ্র, নজরুল, আধুনিক সবধরনের গান গাইতেন। এরপর ঢাকায়ও নিয়মিত গাইতেন রেডিওতে। চলচ্চিত্রে অ্যান্ড্রু কিশোর গান গাওয়া শুরু করেন ১৯৭৭ সালে। ছবির নাম ‘মেইল ট্রেন’। পরিচালক শিবলী সাদিক। এই ছবিতে তিনি গেয়েছিলেন ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানটি। চলচ্চিত্রে এটাই ছিল তার প্রথম গান। সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন আলম খান। তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী চলচ্চিত্রের 'ধুম ধাড়াক্কা'। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'প্রতিজ্ঞা' চলচ্চিত্রের 'এক চোর যায় চলে' গানে প্রথম দর্শক তার গান শুনে এবং গানটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক জনপ্রিয় গান গেয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের গানের এক মুকুটহীন সম্রাটে পরিণত হন তিনি।

একসময় বাংলা চলচ্চিত্র ছিল রমরমা অবস্থায়। তখন শিল্পী, গীতিকার, সুরকাররা সর্বদা ব্যস্ত থাকতেন নতুন গানের সন্ধানে। অ্যান্ড্রু কিশোরও প্লেব্যাকে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে অ্যালবাম বের করার প্রতি আলাদা মনোযোগ ছিল না। তবু বেশকিছু অ্যালবামে কণ্ঠ দিয়েছেন। তবে চলচ্চিত্রই ছিল তার প্রাণ। তার কণ্ঠে ঠোঁট মিলিয়েছেন বাংলা সিনেমার সকল কিংবদন্তি অভিনেতারাই। নায়করাজ রাজ্জাক থেকে শুরু করে আজকের জনপ্রিয় শাকিব খান, কে অভিনয় করেননি অ্যান্ড্রু কিশোরের গানে? ভবিষ্যতে সিনেমায় যারা অভিনয় করবেন, তাদের নিশ্চয়ই আজীবন আক্ষেপ থাকবে এমন নায়কোচিত কণ্ঠের এক বরেণ্য শিল্পীর গানের সাথে ঠোঁট মেলাতে পারেননি বলে।

অ্যান্ড্রু কিশোর কয়েক হাজার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। তারমধ্যে জনপ্রিয়তার তালিকায় অসংখ্য গানই আছে। তবে মানুষের মুখে মুখে ফেরে এমন গানের তালিকাও কম নয়। ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যিখানে’, ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘চাঁদের সাথে আমি দেব না তোমার তুলনা’, ‘বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে’, ‘তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘ভালোবেসে গেলাম শুধু ভালোবাসা পেলাম না’, ‘তুমি আমার কত চেনা’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘তোমায় দেখলে মনে হয়’, ‘এখানে দুজনে নিরজনে’, 'ছোট্র একটা জীবন নিয়ে পৃথিবীতে কেন বলো আসা', 'আমি একদিন তোমায় না দেখিলে', 'সব সখিরে পার করিতে নেব আনা আনা', 'চোখ যে মনের কথা বলে', 'কিছু কিছু মানুষের জীবনে'সহ আরও অনেক গানই মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে।

মোট আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন সেরা কণ্ঠশিল্পী (পুরুষ) শাখায়। ১৯৮২ সালে 'বড় ভাল লোক ছিল' সিনেমার জন্য প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এরপর ১৯৮৭ সালে 'সারেন্ডার' সিনেমার জন্য, ১৯৮৯ সালে 'ক্ষতিপূরণ' সিনেমার জন্য, ১৯৯১ সালে 'পদ্মা মেঘনা যমুনা' সিনেমার জন্য, ১৯৯৬ সালে 'কবুল' সিনেমার জন্য, ২০০০ সালে 'আজ গায়ে হলুদ' সিনেমার জন্য, ২০০৭ সালে 'সাজঘর' এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালে 'কি যাদু করিলা' সিনেমার জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় বাচসাস পুরস্কার ও মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারও পেয়েছেন।

অ্যান্ড্রু কিশোর শুধু বাংলাদেশে নয়, গান গেয়েছেন ভারতেও৷ রাহুল দেব বর্মনের সুরে গেয়েছেন বাংলা ও হিন্দি গানও এবং তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি শিল্পী যে আরডি বর্মনের সুরে গান গেয়েছেন। মোট তিনটি গান গেয়েছিলেন তিনি। তার মধ্যে দুটি হিন্দিতে এবং বাংলা ছবির জন্য একটি বাংলায়। ‘ইসকি টুপি উসকি সার’ নামের গানটা হিন্দিতে গেয়েছিলেন কিশোর কুমার, যার বাংলা ভার্সনটা অ্যান্ড্রু কিশোর গান। বিখ্যাত গীতিকার মাজরু সুলতানপুরির লেখা ‘সুরেজ চান্দা’, ‘মে তেরি বিসমিল হু’ এই হিন্দি গান দুটি গাওয়ার পাশাপাশি বাংলা ‘মুখে বলো তুমি হ্যাঁ, ‘এর টুপি ওর মাথায়’ এবং ‘আজো বয়ে চলে পদ্মা মেঘনা’ গানগুলো পঞ্চমদার সুরে গেয়েছিলেন। উল্লেখ্য যে আরডি বর্মনকে পঞ্চমদা হিসেবেও ডাকা হতো।

তখন ১৯৮৫ সাল। যৌথ প্রযোজনার ছবি। ভারতের হয়ে প্রযোজক ও পরিচালক ছিলেন প্রমোদ চক্রবর্তী। ভারতে এই ফিল্মের নাম ছিল ‘শত্রু’ আর বাংলাদেশে ‘বিরোধ’। অভিনয়ে রাজেশ খান্না ও শাবানা। এ সিনেমায় গান গাইতে গিয়ে খুবই জটিল পরিস্থিতিতে পড়েন অ্যান্ড্রু কিশোর। তিনি তখন দেশের বাইরে। এসে শুনলেন, ‘শাওন সাগর প্রোডাকশনের’ একজন প্রযোজক তাকে খুঁজছেন। উনার সঙ্গে যোগাযোগ করে পরের দিন ভারতীয় দূতাবাসে গেলেন। সেখানে এক বড় কর্মকর্তাকে তাকে পরিচয় দিয়ে খুব গর্ব করে বলেলেন, ‘অ্যান্ড্রু কিশোর বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত গায়ক। আপনাদের আরডি বর্মনের সুরে গান গাইতে আপনাদের দেশে যাবে। কাল-পরশুর মধ্যে ভিসার ব্যবস্থা হলে ভালো হয়। মুম্বাইতে স্টুডিও রেকর্ডিং আছে।’ ওই কর্মকর্তা অনেকক্ষণ শুনে মুচকি হেসে বললেন, ‘যাবেন তো ঠিক আছে, কিন্তু ওয়ার্ক পারমিট কই? ওটা ছাড়া তো গান গাইতে পারবেন না।’ যা হোক, তার পরও মুম্বাইতে গেলেন। সেখানে যাওয়ার পর পরিচালক প্রমোদ চক্রবর্তী খুবই অল্প সময়ের মধ্যে তাকে আপন করে নিলেন। উনার আদি বাড়ি ছিল চট্টগ্রামে। আলাপের একপর্যায়ে ‘ওয়ার্ক পারমিটের’ বিষয়টি উঠলে উনি বললেন, ‘বলিস কী! আমি তো ব্যাপারটা খেয়াল করিনি। তুই এখানেই থাক, ঘুরে ঘুরে মুম্বাই শহরটা দেখ। বিকেলে পঞ্চমের ওখানে তোকে নিয়ে যাব। আমি দিল্লিতে গিয়ে তোর ওয়ার্ক পারমিটের ব্যবস্থা করি।’ পরে সন্ধ্যাবেলা পঞ্চমদার মুম্বাইয়ের বান্দ্রার বাসায় গেলেন। পঞ্চমদা তথা আরডি বর্মন তাকে কখনই নাম ধরে ডাকেননি। আদর করে ‘ঢাকাইয়া’ বলে ডাকতেন। সৌজন্য আলাপের পর পঞ্চমদা বললেন, ‘শোন ঢাকাইয়া, তুই প্রতিদিন বিকেলে আমার এখানে চলে আসবি।’ এর পরেই কেয়ারটেকারকে ডেকে বললেন, ‘এই ঢাকাইয়া এলে এই সিটিং রুম খুলে বসতে দিও।’ বলে রাখা ভালো, সংগীত পরিচালকদের সিটিংরুমে সবাই প্রবেশ করতে পারে না। কারণ, সিটিংরুম খুবই সিক্রেট জায়গা। সেখানে সুর সৃষ্টি হয়। এতে সুর লিক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই সময় পঞ্চমদার সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলেন তিনি। এত কাছের হয়ে গেলেন যে, আশা ভোঁসলের সঙ্গে কীভাবে প্রেম হলো, সেসব গল্পও করতেন ওনার সঙ্গে। তারপর দেশে চলে এলেন। পরে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার প্রায় এক-দেড় মাস পর আবার মুম্বাই গেলেন এবং স্টুডিওতে ভয়েস দেওয়া শুরু করলেন।

গান গেয়ে আসার সময় আরডি বর্মনের সাথে দেখা করলেন। পঞ্চমদা একপর্যায়ে বললেন, ‘তুই হয়তো ভাবছিস, পঞ্চমদার সঙ্গে অনেক ভালো সম্পর্ক, কাজ করবেন, তোকে ডাকবেন, কিন্তু এটা সম্ভব নয়। কারণ, আমরা ইন্ডিয়ান। আমাদের ন্যাশনাল ফিলিংস বেশি। তাই সম্ভব না তোকে বাংলাদেশ থেকে ডেকে ডেকে এখানে এনে গান গাওয়ানো। তবে হ্যাঁ, তুই যদি এখানে থাকতে চাস, এখানে তোদের সম্প্রদায়ের ভালো মেয়ে খুঁজে বের করে দেব। তুই চিন্তা করিস না। থাকতে পারিস। কিন্তু সিদ্ধান্তটা তোর।’ তিনি এক সেকেন্ডের মধ্যেই উত্তর দিয়েছিলেন, ‘দাদা, আমি যেখানে আছি খুব ভালো আছি এবং মনে করি, ওই জগৎটাই আমার। এই জগৎটা আমার জন্য নয়।’ পঞ্চমদা তাকে বুকে জড়ায় ধরে বললেন, ‘তুই আসলেই বাঘের বাচ্চা। এই সাবকন্টিনেন্টের কোনো শিল্পী নাই যে পঞ্চমদা তাকে একটা কথা বলবে, আর তা সে ফিরিয়ে দেবে! ইউ নো ইউর কোয়ালিটি।’

এই ছিলেন অ্যান্ড্রু কিশোর। দেশের প্রতি নিবেদিত একজন বাংলা গানের শিল্পী। তার গান, চিন্তা, চেতনায় বাংলা ভাষাকে, বাংলাদেশকেই লালন করেছেন, গেয়েছেন বাঙালির জীবনের গান। আজ তাই বাঙালি তাকে রেখেছে তাদের হৃদয়ের মণিকোঠায়, সর্বোচ্চ শ্রদ্ধার আসনে। ভালোবাসায় সিক্ত করেছে সবসময়, সর্বত্র।

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক গান লিখতেন না খুব একটা। কারণ তিনি বলতেন, তিনি যা লিখতে চান সব রবীন্দ্র-নজরুল-লালন লিখে গেছেন। কিন্তু 'বড় ভালো লোক ছিল' সিনেমায় 'হায়রে মানষ রঙিন ফানুস' লিখে বলেছিলেন 'এটা যে গাইবে, যে সুর করবে সবাই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবে।' আদতেও হয়েছিল তাই। অ্যান্ড্রু কিশোর গানটি গেয়েই প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ফলে গানটির প্রতি উচ্ছ্বাস তার বরাবরই। পরে যখন বিখ্যাত গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় ও গৌরিপ্রসন্ন মজুমদারের সঙ্গে তার প্রথম দেখা হলো, তখন তারা দুজনই তাকে একই প্রশ্ন করেছিলেন। তাদের কথা হলো, তারা দুই গীতিকার সেই সাম্রাজ্যবাদের পর থেকে আধুনিক গান নিয়ে এত গবেষণা করেছেন, তবুও এসব শব্দ তারা খুঁজে পাননি এবং যাদেরকে বাংলা সাহিত্যের দিকপাল ভাবা হয়, তারাও এসব শব্দের ব্যবহার করেননি। ‘তো, এই গীতিকার ছেলেটি কে?’ প্রশ্ন করেছিলেন তারা। তিনি হেসে বললেন ‘ছেলেটা না, উনি একজন ভদ্রলোক। আমাদের দেশের প্রখ্যাত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক।’

অ্যান্ড্রু কিশোর অনেক কিংবদন্তি গীতিকার ও সুরকারের সাথে কাজ করেছেন। আলম খান ছিলেন তার গুরু। সেইসাথে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, আলাউদ্দীন আলী, শেখ সাদী খান, গাজী মাজহারুল আনোয়ার থেকে শুরু করে অনেক নবীনদের সাথেও কাজ করেছেন। গান গাইতে গিয়ে নারী সহশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন রুনা লায়লা, কনকচাঁপা, সাবিনা ইয়াসমিন, সামিনা চৌধুরীর মত জীবন্ত কিংবদন্তিদের সাথে, আবার নতুন শিল্পীদের সাথেও গেয়েছেন অনেক গান। অ্যান্ড্রু কিশোরের সাথে গান গাইতে সবসময় মুখিয়ে থাকতেন অনেক শিল্পীই। কারণ চলচ্চিত্রে 'প্লেব্যাক কিং' মূলত একজনই।

গানের পাশাপাশি কিছুদিন ব্যবসাও করেন অ্যান্ড্রু কিশোর। ১৯৮৭ সালে আহমাদ ইউসুফ, আনোয়ার হোসেন বুলু, ডলি জহুর প্রমুখের সঙ্গে তিনি টিভি নাটক, বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য প্রযোজনার জন্য ‘প্রবাহ’ নামে একটি বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠান শুরু করেন।

স্ত্রী ও দুই সন্তান রেখে সবার প্রিয় অ্যান্ড্রু কিশোর চলে গেছেন ওপারে। কিন্তু রেখে গেছেন তার জাদুকরী কণ্ঠ, কালজয়ী সব গান এবং কোটি কোটি ভক্ত ও শ্রোতা। বাংলা প্লেব্যাক সংগীতের আকাশ থেকে সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটি খসে গেলেও তার কীর্তিগুলো চাঁদের মত জ্বলজ্বল করবে আজীবন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ